নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালুর দাবিতে উদ্বোধনের প্রায় ৮ মাস পরে ক্লাসবর্জন করে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও পরিচালকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছেন শিক্ষার্থীরা। কলেজে পাঠদান শুরুর একযুগেও হাসপাতালের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু না হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
বুধবার সকালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরের সামনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ‘হাসপাতাল চালু চাই, শিক্ষার পরিবেশ চাই’, ‘স্বাস্থ্যসেবা রক্ষায়, হাসপাতাল চালু চাই, ‘হাসপাতাল চালু হোক, শিক্ষাগ্রহণ সুষ্ঠু হোক’ স্লোগান দেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ হোসেন বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি ক্লিনিক্যাল ক্লাস। তার জন্য প্রয়োজন হাসপাতাল। কলেজ হাসপাতালে জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু থাকার সত্ত্বেও কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হয়নি। ক্লাস করতে যেতে হচ্ছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে যেতে যেমন সময় ও অর্থের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি সেখানে ক্লাস করার মতো পরিবেশও নেই।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে যেতে হয় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে যাওয়ার জন্য একটি বাস বরাদ্দ ছিল। সেটিও দুই মাস ধরে বন্ধ চালকের অভাবে। এ অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। তার ওপর সেখানে যেতে আমাদের নানামুখী ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আউটডোরের সামনে শিক্ষার্থীরা হঠাৎ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। তাঁরা আমার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। তাদের দাবি যৌক্তিক। ওদের একটা বাস ছিল কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। বাসটি বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কষ্ট করে যেতে হচ্ছে, তাই ওরা আন্দোলনে নেমেছে। এখন আমাদের হাসপাতালটি চালু হলে ওদের আর কষ্ট করে যেতে হবে না। আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ইনডোর সেবা চালু করার। কিছু জনবল সংকট রয়েছে। ইনডোরের কার্যক্রম শুরু করতে আমরা প্রশাসনের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব সমস্যা সমাধান হবে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ মিশন পুরণের লক্ষ্যে চিকিৎসাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব কার্যক্রম ও তার সফল বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারই অংশ হিসেবে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পটি গত ১৫ নভেম্বর, ২০২৩ইং সালে শুভ উদ্বোধন করেন। কিন্তু তা পূর্ণাঙ্গরূপে চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থী, রোগী সহ সর্ব সাধারণের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে।
মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ক্লিনিকাল ক্লাস করার জন্য হাসপাতাল কতটা জরুরী। সদর হাসপাতালে অপ্রতুল যন্ত্রাংশ, ব্যাপক রোগীর ভিড়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ প্রভৃতি সমস্যা সত্ত্বেও আমরা বাসযোগে কলেজ থেকে জেলা সদর হাসপাতালে অস্থায়ীভাবে ক্লিনিকাল ক্লাস করে যাচ্ছিলাম এখন বিভিন্ন কারণে বাস সুবিধা বন্ধ হওয়ায় আমরা বিভিন্ন ব্যাচের প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থীর সদর হাসপাতালে যাতায়াত অসম্ভব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত সাত মাস আগেই ৫শ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন তাই আমাদের আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন চিকিৎসা শিক্ষা নিশ্চিন্তের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করা হউক। এতে আমরা সর্বোত্তম চিকিৎসা শিক্ষা লাভ করার মাধ্যমে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের গর্বিত অংশিদার হতে পারব। একই সাথে রোগীদের দূর্ভোগ লাঘব হবে।
আমরা কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ বিশ্বাস করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ঢাকা- কুষ্টিয়া মহাসড়ক সংলগ্ন হাউজিং অংশে ২০ একর জায়গার উপর ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বেশ কয়েকটি ধাপে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি করা হলেও সকল কাজ শেষ করে এখনো পুরোদমে চালু করা সম্ভব হয়নি হাসপাতালটি। গত ২০২২ সালের ৩রা এপ্রিল অস্থায়ী ক্যাম্পাস থেকে নির্মাণাধীন স্থায়ী ক্যম্পাসে শুধুমাত্র কলেজের নিয়মিত ক্লাস এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত বছরের ১৫ই নভেম্বর কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পর স্বল্প পরিসরে বহির্বিভাগ চালু হলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি অন্তর্বিভাগ। কুষ্টিয়াসহ আশপাশের ৫ জেলার মানুষের উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। উদ্বোধনের পরও এখানে অন্তর্বিভাগ বা ভর্তি রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা চালু না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবা প্রত্যাশীরা।