লেখক প্রিন্সিপাল রেজাউল করিমের ফাইল ছবি
প্রিন্সিপাল রেজাউল করিম।।
বিশ্ব জুড়ে জটিলতা-কুটিলতা, কারসাজি চালের মাঝেই আকর্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে রাজনীতি। বিচক্ষণভাবে চিন্তা করতে গেলে দেখা যায় রাজনীতিবিদ ও তাদের নিয়ন্ত্রণকারীগণ অনেক শক্তিধর। সুপথ-কূপথ, দুর্নীতি-মুর্নীতির সমন্বয়ে এগিয়ে যায় কঠিন এক পরিণতির দিকে। সেই পরিণতি পক্ষে বিপক্ষে যেতে পারে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, নির্বাচন, সংলাপ, বিতর্ক, রাজনৈতিক পরিবারতন্ত্রের মাঝেই থাকে প্রতিভাবান ও সম্ভবনাময় নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি। আর এগুলোকে গুছিয়ে সাজিয়ে গুরুত্ব সহকারে নিতে পারলেই রাজনীতিতে বাজিমাত, সেখানে যতই কেলেঙ্কারী থাক, স্বৈরশাসন হউক, আন্তর্জাতিক বিশ্বের রাজনীতিতে বিদ্রুপের ঝড় উঠলেও স্বৈরতন্ত্র থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হলেও স্বৈরশাসক ঠিকই নিজের প্রভাবে স্বৈরাচারী থেকে যায়। বাস্তবে গণতন্ত্রায়নের নবযাত্রা না হয়ে ক্ষমতাসীন ও পরাজিত রাজনৈতিক দলের সহিংসতায় নিহত ও নির্যাতনের হার বেড়ে যায়। এরই মাঝে প্রকাশ পায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, খুন, জখম, ধর্ষণ, হত্যা, হামলা, মামলা, গুম, আগুন, সন্ত্রাস, নাশকতা, গাড়ী, রেল, মন্দির, মসজিদ, পার্টি অফিস, গার্মেন্টস কারখানা আগুন ও ধ্বংস কান্ড সহ অমানবিক পাশবিক নির্যাতনের ফলে মানুষের জীত্রনই শুধু বিপন্ন হয় না, সর্বস্তরের নাগরিকই নির্বিশেষে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। অথচ সরকারী ও বিরোধী দল কি কখনও চিন্তা করে এই বিপন্ন জনগোষ্ঠীর কথা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় প্রতিবন্ধী হওয়া মানুষ গুলোর প্রতি রাষ্ট্রীয় কার্যকর উদ্যোগ কঠিন ভাবে নিতে হবে, সকলকেই সহিংসতার পথ থেকে দূরে সরে যেতে হবে এবং দেশকে ভালবেসে উভয়ের সঠিক সংলাপের মাধ্যমে কোন বিষয়ে একগুয়েমিনা করে দেশ ও জাতির দিকে লক্ষ্য রেখে অগনিত মানুষের জীবনহানী দূরে থেকে দেশকে ভালবাসায় শ্রেয় কাজ। সকলেরই দায়িত্ব হওয়া উচিৎ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা সহিষ্ণু জাতি হিসাবে মানুষের দায়িত্বকে পাশ কেটে যাওয়া কোনক্রমেই সমচিন নয়। আর সেই সুযোগ হয়তো নেই কারণ আমাদের মাঝে ভীরুতা নেই। বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি দলই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্নাত হওয়ায় দেশের মানুষের ইতিবাচক পরিবর্তনের, সংগ্রামের পথে সকল অশুভ শক্তির মহড়া রুখে দেওয়ার জন্য শুভ শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী এবং এটাই উপযুক্ত সময়। অনেক গভীরে প্রবেশ করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ গুলোর জন্য কার্যকর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নিতে হবে। আর এই উদ্যোগ নিলেই সমস্যার একটি টেকসই সমাধান পাওয়া যায়। কিন্তু এই টেকসই সমাধান না করলে মানুষ দূর্ভোগে পড়বে আর সেখানেই ক্ষমতায় টেকা ও না টেকা মানুষের হাতে নির্ভর করবে, তবে মানুষ যত বেশী দূর্ভোগে পড়বে। তত বেশী ক্ষমতাবান হয়ে উঠার চেষ্টা করবে এবং যারা সুপথে থাকবে তারা ক্ষমতা পাবে এটাই ধারণা করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশের জন্য সেটা কতটুকু প্রযোজ্য বলা কঠিন। তবে আঘাতে আঘাতে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মানসিক প্রতিবন্ধিতা চিরতরে দূরীভূত হবেই হবে। আর এটা না হলে দেশ ধ্বংস হবে, ক্ষমতা অন্যের হাতে চলে যাবে, যেটা জাতির কারও কাম্য নয়। এই অনিবার্য ও ক্রমবর্ধমান সংঘাতের হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। অস্পষ্টতা কিংবা সবাইকে খুশি করার চেষ্টা রাজনীতির এক অনস্বীকার্য সম্পদ। আর এই বিভক্ত রাজনৈতিক দৃশ্যপটের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিতেই হবে। নইলে ভাইয়ে-ভাইয়ের এই সংঘাত ঘণীভুত হয়ে কঠিন সংঘাতে রুপ নেবে। যেখানে গৃহযুদ্ধ সহ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হানবে।
দেশে রাজনৈতিক সংকট ক্রমান্বয়ে ঘনিভুত হচ্ছে। একজোট আরেক জোটকে দায়ী করছে। পরনিন্দা পরচর্চা করে যার যার পাপে সে সে পুড়ছে বা পুড়বে। সংঘাত আর সংঘর্ষ চলছে আর চলছে। সরকার আর বিরোধী জোট ক্ষমতা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থায় থাকায় সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। মানুষ আগুনে পুড়ে মরেছে ও মরবে। তবু এই নগ্ন প্রতিযোগীতা থামছে না। সহিংস রাজনৈতিক দ্বন্দে সংঘাতের বলি হচ্ছে মানুষ। এই সহিংসতার হাত থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি চাই। কারণ সাধারণ মানুষই বেশীর ভাগ জীবন দিচ্ছে। তাই তারা হানাহানির রাজনীতিতে থাকতে চাইনা, গড়তে চাই বিকল্প রাজনীতি, যেখানে থাকবে না কোন হানাহানি, সহিংসতা। সহঅবস্থানে থেকেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। তবে কোন বিদেশী শক্তির কাছে গৃহবন্দী হতে বাঙ্গালী চাইনা। যে আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন নিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে তা এখনও পূরণ হয়নি। জনগণ পরাজিত শক্তির কাছে মাথানত করতে চাই না। দেখতে চাইনা স্বৈরাচার আর স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনৈতিক মঞ্চে উন্মাদ নৃত্য। এদেশে নীতি আদর্শবর্জিত ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতি দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, কত নিচে তার অবস্থান একটু ভাবলেই বোঝা যায় দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাসের সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষমতার খেলায় বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেতে নতুন মেরুকরণ করতে হবে। এবং গণতান্ত্রিক ধারাকে শক্তিশালী করে ব্যক্তি স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে সাংবিধানিক ভাবে গণতান্ত্রিক মূল ধারার থেকে সুবিধাবাদী রাজনীতি পরিহার করে, সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদের বিপদের আশঙ্কা মুক্ত থেকে দেশকে গড়ার জন্য চলতি বিপদের মোকাবেলা করা আজ দেশবাসীর সামনে একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য। তবে রাজনৈতিক কর্তব্য রাজনৈতিক ভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করে মোকাবিলা করতে হবে। এখানে সন্ত্রাস কুট কৌশল বা চালাকির আশ্রয় নিলে হিতে বিপরিত হবে। চালাকি, ষড়যন্ত্র, অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী হয়ে যায় এবং এর প্রেক্ষিতে অন্য ধারার রাজনীতির জন্ম নেয় ও সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিষ্ট শক্তির উত্থানের মাধ্যমে দেশের শান্তি বিঘ্নিত হয়ে অরাজকতা জন্ম নেবে। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ক্ষমতাসীন হওয়ার রাস্তা তৈরী হবে। তাই সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিষ্ট শক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করে গণতান্ত্রিক ধারা জোরদারের মাধ্যমে সকল অরাজক কর্মকান্ড থেকে সারা দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে শাস্তিতে থাকার জন্য সুব্যবস্থা করায় সরকার ও বিরোধী জোটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।
আর নয় হত্যা, আর নয় জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, আর নয় অগ্নিদগ্ধতায় বাড়ী ঘর, যানবাহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অতি সাধারণ মানুষের জীবনাবসান, পরিবার পরিজনের হাহাকার, বুক ফাটা কান্না, চারিদিকে শুধু কষ্টের চিৎকার, তাই মনে হচ্ছে পুড়ছে স্বদেশ সেই সাথে দিশাহীন আশাহীন সাধারণ মানুষ গুলো নীতিহীন রাজনীতির কাছে নতজানু হয়ে দেখছে শুধু সন্ত্রাস, হরতাল, অবরোধ, মৃত মানুষের গোঙ্গানী ও স্বজন হারাদের আহাজারী। তবু সেটা কণ্ঠ দিয়ে জোরালো ভাবে চিৎকার আকারে বেরুচ্ছে না, হিম শীতল নীরব নিথর ভাবে দু’চোখের অশ্রু ধারা ছল ছল হয়ে বলছে আমরা অসহায়। আমাদের নেতৃত্ব দাও, আমরা জেগে উঠে প্রতিবাদ প্রতিরোধী করে মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতা প্রাপ্ত এ জাতিকে বাঁচাতে হবেই হবে। মুক্তিকামী জনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াও, আমরা বিশ্বের বুকে এদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করে সন্ত্রাস, সমাজ বিরোধী ও রক্তচোষাদের নিশ্চিহ্ন করে, রাজনৈতিক সহিংসতা দূরীভূত করে এ সোনার দেশে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার সুব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের রক্তের ঋণ শোধ করে গণতন্ত্রকে রক্ষা করবো। আমরা অপরাজিত জাতি। কল্পনা প্রসূত নয়, বাস্তবতায় আমাদের লক্ষ্য। এ জাতি বীরের জাতি। গণতন্ত্রের সংগ্রামে জয়যুক্ত হবে, অরাজকতা-জঙ্গিবাদ ধ্বংস হবে। বুদ্ধিজীবিদের বুদ্ধির মাধ্যমে তাদের নির্দেশিত পথে, তাদের মতামতের সুযোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল গুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশের শান্তি গণতন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। স্বার্থের মোহে বুদ্ধিজীবি সমাজ কখনও কখনও দিকভ্রান্ত হয়ে সুবিধাবাদিতায় চলে যায়। তারপরও মানুষ লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবিদের কাছ থেকে যৌক্তিক ভূমিকা আশা করে। বুদ্ধিজীবিদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া যতই থাকুক তারপরও বুদ্ধিজীবিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বুদ্ধিজীবি সমাজ যুগের দিশারী। বুদ্ধিজীবিদের সমালোচনা আছে স্বাধীনতার সময় কিছু বুদ্ধিজীবিরা যা বলতেন তা শুনলে দেশ স্বাধীন হতো না এবং বর্তমানেও অনেক বুদ্ধিজীবির কথা শুনলে সংকট নিরসন হয়ে সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন আসবে না। সুবিধাবাদিতায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। তবে এর মাঝেও বহু সাহসী কণ্ঠ সত্যের প্রকাশ করে থাকে সময়ের দাবিতে জাতির প্রয়োজনে এরাই সুবিধাবাদিতা ও আপোষকামিতা রুখে সত্যের পথ প্রদর্শক হিসেবে এ জাতির মুক্তি আনবে আর এদের মাধ্যমে ও মতামতের মূল্যায়ন করে রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্বের বুকে এ জাতিকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে গড়ে তুলবে। প্রমাণ হবে বাঙালী বীরের জাতি। তাই “সংঘাত নয়, মুক্তি চাই।”