নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আওয়ামীলীগের দোসরদের দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করছে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। তাঁরা সম্পর্কে মামা ভাগ্নে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে “মামা ভাগ্নের কমিটি বাতিল কর করতে হবে” বলে স্লোগান দেওয়া হয়।
বিএনপির নেতাদের চাঁদাবাজির কারণে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে চালের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের একাংশের নেতারা। কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তাঁরা এ অভিযোগ করেন। তবে জেলা বিএনপি চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন–সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির আয়োজনে কর্মশালায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন। এ কর্মসূচি চলাকালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অবমূল্যায়নের শিকার ও পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা শিল্পকলা একাডেমি সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সকাল ১০টা থেকে শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে কর্মশালা চলতে থাকে। অন্যদিকে দুপুর ১২টার দিকে শহরের ইসলামিয়া কলেজ মাঠে জড়ো হয়ে কয়েক হাজার নেতা–কর্মী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের এনএস রোড প্রদক্ষিণ করে সাড়ে ১২টার দিকে শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে যায়। নেতা–কর্মীরা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় নেতা–কর্মীরা ফটকের সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেহাবুর রহমান পুলিশ নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে যান। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীদের কেউ কেউ জোর করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। পরে শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনেই সমাবেশ করেন তাঁরা। বেলা সোয়া একটার দিকে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করে তাঁরা চলে যান।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে সমাবেশে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম উল হাসান অপু বলেন, দলের নিবেদিতপ্রাণ ও আওয়ামী দুঃশাসনের হামলা–মামলা নির্যাতনের শিকার নেতা–কর্মীদের বাদ দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতাদের চাঁদাবাজির কারণে আজ কুষ্টিয়ার মোকামে চালের দাম বেড়ে গেছে।
চাঁদাবাজির কারণে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘আমি কর্মশালায় আছি। তারা যে বক্তব্য দিয়েছে, তা অমূলক ও কল্পনাপ্রসূত। এসব কথার কোনো সারমর্ম নেই।’
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক বশিরুল আলম চাঁদ বলেন, এই কমিটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ মানে না। তারা নিজেদের মতো চলে। মামা-ভাগনের কমিটি বাতিল না হওয়ায় আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, এই কমিটি বাতিল না হলে আগামী দিনে বিক্ষোভ করা হবে। বিক্ষোভ, হরতালসহ কুষ্টিয়াবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কুষ্টিয়া অচল করে দেওয়া হবে।
জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মেজবাউর রহমান পিন্টু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পুনর্বাসনকারী এই আহ্বায়ক কমিটি বাতিল না হলে রাজপথে থেকে দাবি আদায়ে আন্দোলন আরও কঠোর করা হবে।
জেলা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি গোলাম কবির তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিএনপির কমিটিতে ঢুকিয়ে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এই কমিটি মানি না।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বাতিল করা হয়। ২০১৯ সালের ৮ মে সৈয়দ মেহেদী আহমেদকে সভাপতি ও সোহরাব উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এর আগে ২০১২ সালে গঠিত কমিটিতে এই দুজন একই পদে ছিলেন।
২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচারের সময় মাঠে ছিলেন না।
১৭ নভেম্বর কমিটি বাতিলের দাবিতে শহরের এনএস রোডে প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে একাংশের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। একই দাবিতে ৬ নভেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ করে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন নেতা-কর্মীরা। ৮ জানুয়ারি থেকে দাবি আদায়ে তিন দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম রিন্টু, আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু প্রমুখ।