কুষ্টিয়া অফিস:
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে রাজু হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে চলছে লুটপাট ও নৈরাজ্যের মহোৎসব। স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে ৪৬ টি মহিষ লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মন্ডলপাড়া ঘাটের নিচের চরে গত ১০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার সময় ইব্রাহীম প্রামানিকের ছেলে রাজুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার ও উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হয়ে স্বার্থন্বেসীভাবে গত ১১ ফেব্রুয়ারি একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে দৌলতপুর থানাতে। যার মামলা নং-১৬, ধারা-৩০২/৩৪। এই মামলার ১৫ নং আসামী হৃদয় বর্তমানে ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছে। তাকে আসামি করা একেবারেই উদ্দেশ্যে প্রণোদিত বলে স্থানীয় সুশীল সমাজে নানান গুঞ্জন চলছে।আরো জানা যায়, রাজু হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পরদিন বিএনপি নেতা সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে তার ভাতিজাগন ও সহযোগীরা সাঈদ মন্ডল নামের এক ব্যাক্তির মহিষের বাথান (খামার) থেকে ৪৬ টি মহিষ লুট করে নিয়ে যায়।
এঘটনায় জড়িতরা হলেন- কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলা পূর্ব ফিলিপনগর গ্রামের মৃত জামাত প্রামাণিকের ছেলে হান্নান ওরফে হানা প্রামাণিক (৫৮), বৈরাগীরচর জুব্বারপাড়া, ভাঙাপাড়া গ্রামের মৃত হামেদ প্রামাণিকের ছেলে বকুল (৩৮), মুজাফ্ফর প্রামাণিকের ছেলে জাকির প্রামাণিক (৩৮), সাজদার মাছআলার ছেলে পলাশ, ছাপাত ভুরুকাটার ছেলে ইমরান (২৫), মুজাফ্ফর প্রামাণিকের ছেলে জিম প্রামাণিক (২২), বক্কার (৫২), অভি প্রামাণিক ও অজ্ঞাত আরো অনেকে। এরা সকলেই সাবেক চেয়ারম্যান স্থানীয় বিএনপি নেতা সাইদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর।
লুটকারী ব্যাক্তিরা সাঈদ মন্ডলের বাথান (খামার) থেকে মহিষ রক্ষনাবেক্ষন (রাখালের) দায়িত্বে থাকা মাজদার, কামাল ও শওকতকে মহিষ লুটের সময় জিম্মি করে নিয়ে যায়। লুটকারী চক্রের প্রধান হোতা সাইদুর রহমানের ভাতিজা জাকির ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে জাকির বাহিনী গঠন করে এলাকাতে লুটরাজ, চাঁদাবাজি, দখল, ফেন্সিডিল, অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে একটি সূত্রে জানা যায়। জাকির বাহিনীর দৌরাত্ম্যে চরম আতংক বিরাজ করছে স্থানীয় জনমনে। এলাকাতে সৃষ্টি চরম বিশৃঙ্খলা।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বেপরোয়া জাকির বাহিনীর প্রধান জাকির চরাঞ্চলের ত্রাস ক্ষ্যাত পান্না বাহিনী প্রধান পান্নার আপন ভাগিনা। পান্না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। জাকির তাঁর মামা ও চাচাদের কারনেই এলাকাতে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রেখেছে।
লুটপাট হওয়া বাথানের মালিক ভুক্তভোগী সাঈদ বলেন, আমি চরে জমি লিজ নিয়ে চাষ করি। আমার গরু ও মহিষের বাথান (খামার) আছে। আমার বাথানের পাশে পদ্মা নদীর মধ্য চরে রাজুকে কে বা কারা গুলি করেছে শুনেছি। গাড়ির কাগজ করার জন্য ৩ দিন যাবৎ আমি ঢাকাতে। আমি সহ আমার আরো দুইভাই ও আমার বংশের কয়েকজনের নামে মিথ্যা একটি হত্যা মামলা হয়েছে। আমার মহিষ লুটপাট ও আমার তিন রাখালদের নিয়ে গেছিলো তারা। আজ সকাল ১১ টার দিকে তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে। ঘটনার দিনমামলা করার জন্য দৌলতপুর থানাতে আমার পরিবারকে পাঠায় ও সারাদিন আমার মহিষ লুট করে কোথায় কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই বিষয়টি থানাকে অবহিত করি। মামলা নেওয়া হবেনা বলে থানার মধ্যে দায়িত্বে থাকা কয়েকজন পুলিশ সদস্য আমার বৌকে থানার ভিতরে ঢুকতেই দেয়নি। আরো বলেছে, ওরা আছে আপনারা বাইরে যান। উল্লেখিত বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি। বিষয়টি দেখছি। আর কারাগারে থাকা ব্যাক্তিকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাদীপক্ষ মামলা দিলে কি করার।
দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হুদা বলেন, লুটতরাজের বিষয়ে অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। তবে গতকাল লুটের শিকার হওয়া মালিকের পরিবারের সদস্যরা থানাতে এসেছিলো কিনা আমার জানা নেই। একই বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদের মোবাইল উল্লেখিত বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার কল করা হলে তিনি ফোন কেটে কেটে দেন। এদিকে মহিষ লুট করে নিয়ে যাওয়ার দিন দুপুরে মহিষের বহর সহ লুটকারীদের সাথে দেখা হয় প্রতিবেদক দলের। তারা সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে মহিষ লুটের বিষয়টি স্বীকার করেন।
এই বিষয়ে মরিচা ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমার ভাইয়ের নাতি মারা গেছে। আমি সারাদিনই থানায়। তবে আমার ভাতিজা মহিষ লুটের সাথে জড়িত থাকলেও থাকতে পারে। প্রসঙ্গে দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা তিনি জানান, আমি অসুস্থ্য। বিষয়টি আমার জানা নেই।