ছবি: দুশ্চিন্তায় মগ্ন অসহায় শাহজাহান
কুষ্টিয়া অফিস।।
না আছে তিন বেলার খাবার, না আছে খাবার কেনার টাকা। ১০ দিন হলো ইজিবাইকটা চোরে চুরি করে নিয়ে গেছে। একমাত্র আয়ের উৎস এই গাড়িটাও চোরে নিয়ে গেলো। চোরও গরীবের দুঃখ বোঝেনা। পরিবারকে নিয়ে দু’বেলা ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র উৎস হারিয়ে কান্না জড়ানো কন্ঠে কথাগুলো বলেন হারিয়ে যাওয়া ইজিবাইকের চালক শাহজাহান।
বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে শাহজাহান বলেন- “দীর্ঘদিন ধরে হরিনারায়নপুর পুলিশ ফাঁড়ির ডিউটি করেছি। চুরির পর ফাঁড়িতে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। ফাঁড়ির অফিসারের নির্দেশনা মোতাবেক জিডি করেছি। অফিসারের কাছে আশ্বাস পেয়েছিলাম, হারিয়ে যাওয়া ইজিবাইক না পাওয়া গেলেও থানার ওসি স্যার আমাকে একটা ইজিবাইক কিনে দেবেন। সেই আশ্বাসে ইজিবাইক হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাতে বেশ কিছু টাকা ধার করি। এখন শুনি সেই ওসি স্যার নাকি অন্য থানায় বদলি হয়ে গেছেন। তিনি আর হয়তো আমাকে কিনে দেবেন না। একেতো ইজিবাইকটা চুরি হয়ে গেল, তারপর আবার ঐ ইজিবাইকে গত কয়েক মাস আগে বাকি করে ৩টি ব্যাটারী লাগিয়েছিলাম। তার পাওনা ৭৫ হাজার টাকা। সেই সাথে সংসার চালাতে ধার নেওয়া টাকা। এখন ব্যাটারীর টাকা পরিশোধ করবো নাকি আরেকটা ইজিবাইক কেনার টাকা যোগাড় করবো নাকি ধার নেওয়া টাকা ফেরত দেবো। কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না! এরপর পরিবারের খাওয়া-দাওয়া, সন্তানদের লেখাপড়া, ঔষধ, লোন কতকিছুর খরচ জোগাড় করতে হবে। আমাকে একটা ইজিবাইক কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন আপনারা? আমি আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। আমার খুব উপকার হবে। পরিবার নিয়ে অন্তত দু’বেলা ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে যেতে পারবো।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া ইবি থানাধীন হরিনারায়নপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের ওমর মন্ডলের ছেলে শাহজাহান মন্ডল (৪৩)। তার একটি ইজিবাইক ছিল। গত ১ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক দেড় টার সময় সে গাড়িটা নিয়ে দুপুরে খাওয়া দাওয়া করার জন্য বাড়িতে যায়। ইজিবাইকটি তার শিবপুর গ্রামস্থ নিজ বসত বাড়ির সামনে পাঁকা রাস্তার উপর রাখেন। এরপর তিনি খাওয়ার উদ্দেশ্য বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন। বাড়ির ভিতরে থাকার সুযোগে অজ্ঞাতনামা কে বা কারা তার ইজিবাইকটি নিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িটি দেখতে না পেয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। তবে তাতে কোন লাভ হয়নি। এখন পর্যন্ত সন্ধান মেলেনি হারিয়ে যাওয়া ইজিবাইকের।
এদিকে ইজিবাইক চুরি যাওয়ার পরদিন ২ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন ভুক্তভোগী শাহজাহান। জিডি নং: ৬৩। এই ডায়েরী সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্বে রয়েছেন হরিনারায়নপুর পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ ইউসুফ আলী শাহীন। তবে দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত চুরি যাওয়া ইজিবাইক উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
অন্যদিকে, ইজিবাইক চালক অসহায় শাহজাহানের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তশালী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসীরা। এসময় বিত্তশালী হৃদয়বান মানুষদেরকে অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন- “আপনারা সমাজের বিত্তশালী হৃদয়বান মানুষ। অসহায় মানুষদেরকে আপনারা সহায়তা করে থাকেন। আশাকরি আপনাদের ভিতরে কেউ না কেউ অসহায় শাহজাহানের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন। অসহায় শাহজাহানকে একটি ইজিবাইক উপহার হিসেবে দিয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিবেন।