Pathikrit Most Popular Online NewsPaper

    নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

    কুষ্টিয়া ঢাকঢোল পিটিয়ে গত বছর ২ ডিসেম্বর কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন করা হয়। জানা যায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ রেস্টুরেন্টটি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেন। ১০ কর্মদিবস অতিক্রম করলেও মৌখিক অনুমতি নিয়ে চলছে কাচ্চি ভাই।কোন ধরনের বৈধ কাগজপত্র না করেই নিজেদের ক্ষমতা ও অর্থ ব্যবহার করে এই রেস্টুরেন্ট চালু করা হয়েছে। অথচ এই রেস্টুরেন্ট হওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল ফ্ল্যাট মালিকেরা। কিন্তু তাদেরকে উপেক্ষা করে আলী এনজো এন্ড এন আর টাওয়ারের আবাসিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় এই রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট হওয়ার পর থেকে ফ্ল্যাট মালিকেরা নিরাপত্তা জনিত কারণে পৌর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে রেস্টুরেন্টটি বন্ধের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতা বলে কোন ধরনের বৈধ কাগজপত্র না করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কাচ্চি ভাই নিরালাস ভাবে তার ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে।

    অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই রেস্টুরেন্টে ১০/১৫টি বড় বড় চুলার গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে। নাই ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র। নেওয়া হয়নি পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স। ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার যে শর্ত দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ তার কোন বালাই নেই এই রেস্টুরেন্টের। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ফায়ার সেফটি, রেস্টুরেন্ট প্লান, বিল্ডিংয়ের আপোষ নামা ও রান্না ঘর কোন একটি নিরাপদ স্থানে রাখার শর্ত দিয়েছেন তারা। তা পূরণ করতে না পারায় কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। তবে কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতার বলে ১০ কর্মদিবস পার হয়ে গেলেও তারা রেস্টুরেন্ট বন্ধ না করে চালিয়ে যাচ্ছে বহাল তবিয়তে।

    পৌর কর্তৃপক্ষ বলছেন, অনুমোদন বিহীন রেস্টুরেন্ট বন্ধের জন্য নির্দেশ আদর্শ কর তফসিল ১৪ আইন বলে পৌরসভার ভৌগলিক সীমানার মধ্যে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করার কোন সুযোগ নেই। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্স কেও চিঠি করা হয়েছে। ফ্ল্যাট মালিকেরা অভিযোগ করে বলেন, এই বিল্ডিং এর সিঁড়িও একটি লিফটও একটি। অথচ এই একটি সিঁড়ি লিফট দিয়েই রেস্টুরেন্টের লোকজন ও ফ্ল্যাটের লোকজন উঠানামা করছে। যার ফলে ফ্ল্যাটের আবাসিক এর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সেই সাথে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ফ্লাট মালিকেরা। এছাড়াও দুই তলায় এই রেস্টুরেন্ট হাওয়ায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ফ্ল্যাট মালিকেরা। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

    ফ্ল্যাট মালিক ড. মোঃ রকিবুল ইসলাম (রাকিব) জানান, এই রেস্টুরেন্ট হওয়ার আগ থেকেই এখানে আবাসিক এলাকায় যেন বাণিজ্যিক ভাড়া না দেওয়া হয় এই ব্যাপারে আমরা অভিযোগ করে আসছি। ভবনটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ফ্লাট মালিকগনের সমন্বয়ে গঠিত আহবায়ক কমিটির জরুরী সভায় ভবনটির নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও নিরাপদ স্বাস্থের কথা বিবেচনা করে এখানে রেস্টুরেন্ট না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। কিন্তু আমাদের ফ্ল্যাট মালিকদের উপেক্ষা করে এখানে কাচ্চি ভাইকে ভাড়া দেয় এক অংশের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ গোলাম মোস্তফা ও ডেভেলপার। যার ফলে আমাদের জীবন নাশসহ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে সকল কিছু। এজন্যে আমরা রেস্টুরেন্ট হওয়ার আগে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক, কুষ্টিয়া পৌরসভা, ফায়ার সার্ভিস, নিরাপদ খাদ্য অফিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসটিআইয়ের বরাবর দরখাস্ত করেছি যেন এই বহুতাল ভবনে আমাদের জানমালের রক্ষার্থে রেস্টুরেন্ট এখানে না হয়। কিন্তু তারপরেও কোন এক অজানা শক্তিতে এরা সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রেস্টুরেন্টটি দাপটের সঙ্গে উদ্বোধন করে চালিয়ে যাচ্ছে। অতি দ্রুত এই কাচ্চি ভাই এখান থেকে উঠিয়ে আমাদের জানমাল রক্ষার জন্য দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটলে সম্পূর্ণ দায় নির্দিষ্ট কতৃপক্ষকেই নিতে হবে।

    তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, আমরা এই বিল্ডিংয়ের এক অংশের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ গোলাম মোস্তফা (জিনি রেস্টুরেন্ট ভাড়া দিয়েছেন), ডেভেলপার ও নির্দিষ্ট কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। অথচ কাচ্চি ভাই তৃতীয় পক্ষ হয়ে আমাদের সাথে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে।স্থানীয়রা বলেন, একটি আবাসিক ভবনে এই ধরনের বড় রেস্টুরেন্ট ভাড়া না দেওয়াই ঠিক ছিল। কেননা যে কোন সময় আগুন ধরলে এখানে বড় ধরনের জান মালের ক্ষতি হবে। ভবনটিতে বানিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য আলাদা সিড়ি, লিফট ও ইমারজেন্সি এক্সিট এর কোন ব্যবস্থা নাই। এতে ঢাকার উত্তরার রেস্টুরেন্টের মত ভয়াবহ প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটতে পারে কুষ্টিয়ায় কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের আবাসিক ভবনে। তাই অতি দ্রুত এটি স্থানান্তর করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার কুষ্টিয়ায় রেস্টুরেন্ট এর জন্য কোন ধরনের কাগজপত্র না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। এমনকি কুষ্টিয়া পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্সটিও পাননি বলে জানান তিনি।

    তিনি আরো বলেন, রেস্টুরেন্ট চালুর পাঁচদিন আগেই আমরা ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলাম কিন্তু কুষ্টিয়া পৌরসভা আমাদেরকে এখন পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স দেয়নি। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া অন্যান্য কাগজপত্র করা সম্ভব নয়। বন্ধের চিঠি পেয়েছেন স্বীকার করে জানান, আমাদের আইন উপদেষ্টারা বিষয়টা দেখছে আমরা মৌখিক অনুমতি নিয়ে বর্তমানে রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছি।

    কুষ্টিয়া পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক [অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার (অ:দা), কুষ্টিয়া] মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা রেস্টুরেন্ট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। এখন বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

    Spread the love