নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কুষ্টিয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার ছড়াছড়ি। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জেলা জুড়ে বছরের পর বছর চলছে অবৈধ ইটভাটা। সরকারী নীতিমালা ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা ঐ ইটভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঁচা গাছ। আর এইসব গাছ কাটতে অনেক ইটভাটাতেই বসানো হয়েছে স’মিল। এতে বনজ সম্পদ উজাড়ের পাশাপাশি কৃষিজমি নষ্ট, ফসলহানি ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে মারাত্মকভাবে। আর প্রকাশ্যে এইসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে ইটভাটা চলতে মদদ দিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু প্রভাবশালীরা। এইসব অবৈধ ইটভাটা ঠেকাতে গঠন করা হয়েছে ইটভাটা মালিক সমিতি। কুষ্টিয়াতে অবৈধ ইটভাটার মালিক সমিতির কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে প্রশাসন। এমন জনশ্রুতি থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চুপচাপ। অভিযোগ রয়েছে ভাটা মালিক সমিতির শক্তিশালী সিন্ডিকেটের প্রভাব, অর্থবিত্ত ও তদবিরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা অবৈধ ভাটা সম্পূর্ণরূপে উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। তথ্যসূত্র বলছে, কুষ্টিয়াতে ২১৮টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে সরকারের নিয়ম নীতি মেনে চলা ও বৈধতা রয়েছে ১৫ টি ইট ভাটার । বাকি ২০৩টি ভাটা চলছে অবৈধভাবে । কোন প্রকার নিয়মিত তোয়াক্কা না করে গাছের গুড়ি ও টপ সয়েল কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে এবং ক্ষতি সাধন করছে। অবৈধ ভাটার মধ্যে ফিক্সড্ চিমনির ৯৬টি, জিগ-জ্যাগ ৬৫টি ও মাত্র ৩০/৪০ উচ্চতাসম্পন্ন ড্রাম চিমনির ইটভাটা ৪১টি । সরকারি আইনে কৃষি জমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু অবৈধ সব ইট ভাটা গুলো অদৃশ্য ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কৃষিজমি , স্কুলের পাশে, ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাসহ নিষিদ্ধ এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে। সূত্রে আরও জানা যায়,কতিপয় ভাটা মালিক উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়ে সৃষ্টি করেছে আইনি প্রতিবন্ধকতা। ফলে আইনি জটিলতার পাশাপাশি প্রশাসনিক নির্লিপ্ততায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধসহ থামছে না গাছপালা নিধন তৎপরতা। প্রতিটি ইটভাটার জন্য তিন-চার একর কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন করেছে প্রভাবশালীরা। আইনের ফাঁক-ফোকর ডিঙিয়ে জেলায় গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ ইটভাটা। প্রতি বছরের মতো এবারও চলতি মৌসুমের শুরুতেই কৃষিজমি ও নদীর পলি মাটি কেটে ইটভাটাগুলোতে প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন ইট। এতে জেলায় কৃষিজমি হ্রাস ও উদ্বেগজনকভাবে কমছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। কুষ্টিয়া সচেতন মহল দ্রুত এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জোর দাবি জানিয়েছেন। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলার মানুষ বলেন, আইন আছে কিন্তু কেউ মানে না। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। প্রতিবছরের মতো এবারও ইট তৈরির মৌসুমে প্রতিদিন ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এছাড়া ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে ফসল ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। লাইসেন্সবিহীন ইটভাটাগুলো প্রশাসনসহ অন্যান্যদের ম্যানেজ করে চালানো হয়। তা না হলে এই অবৈধ্য ইটভাটাগুলো প্রতিবছর চালুই হতো না। আর এগুলো চালু হতে বিভিন্ন জায়গায় ম্যানেজ করে এই ইটভাটা মালিক সমিতি। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট মোঃ হাবিবুল বাশারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। (চলমান)