কুষ্টিয়া অফিসঃ
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান সম্রাটের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে দুদক সহ নানা দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এক নারী ইউপি সদস্য। অভিযোগের পর বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদে দীর্ঘ সময় ধরে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু দুদকের অভিযানের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ এখনও জানা যায়নি।
জানা যায়, সংরক্ষিত আসনের ওই নারী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে চেয়ারম্যানের বিস্তর দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। চেয়ারম্যান এবিষয়ে জানতে পেরে তার গুন্ডা বাহিনীর মাধ্যমে ওই নারী সদস্যকে হুমকি দেন ও লাঞ্চিত করেন। পরে তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দুদকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
১২ নং হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান রূপসী আক্তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান সম্রাট এবং তার ইউনিয়ন সচিব ওলিউল কালাম আজাদ অনেক দিন ধরে অনিয়ম করে যাচ্ছেন। বরাদ্দকৃত কাজের কোন মিটিং আলোচনা ছাড়াই সবকিছু নিজের লোকজন দিয়ে পরিচালনা করেন। কৌশলে সচিবকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়ে পরে ইচ্ছামত গদ (বর্ণনা) বসিয়ে দেন। ১৫টি প্রকল্পের টাকা লামছাম কাজ করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া কাজ করার কথা বলে হাট বাজারের তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার, ট্রেড লাইসেন্সের প্রায় চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার এবং বাসা বাড়ীর ট্যাক্স প্রায় দশ লক্ষ অর্থাৎ মোট প্রায় ১৭ লক্ষ টাকার ১% হিসাবে প্রায় দুই লক্ষ টাকা কাজ না করে নিজেই তুলে নিয়ে আত্মত্মসাৎ করেছেন। প্রতিবছর ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় দশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা সর্বনিম্ন আয়। তারপরেও তিনি তিন লক্ষ টাকা বাজেট ঘাটতি দেখিয়েছেন। হিসাব চাইলে সচিব কোন হিসাব দেয় না। মেম্বরদের মাসিক বেতন ৪৪০০ টাকা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বহন করার কথা। ৮-৯ মাস পর চার মাসের বেতন দিলেও তার থেকে ৪০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়। হাট বাজার বরাদ্দের টাকার নামে আবার বেতনের টাকা না দিয়েও বেতন বহিতে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। এদিকে কৃষকের বরাদ্দের বিষয়ে কোন মেম্বরদের সাথে আলোচনা না করেই দেওয়া হয় । এবিষয়ে তিনি প্রতিবাদ করলে রাতে তার বাড়িতে গিয়ে চেয়ারম্যানের নাম করে ০৪ জন দেশীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রাণ নাশের হুমকী দেয়। এ বিষয়ে তিনি ইবি থানায় গিয়ে ওসিকে সব বিষয়গুলো বলেন। ওসি অজ্ঞাত নামে একটি অভিযোগ নেয়। এতে তার প্রাণ নাশের হুমকী আরও বেড়ে যায়। তখন তিনি প্রাণে বাঁচতে পেপারিং করে সকলকে বিষয়টি জানান। তাকে মারতে না পেরে চেয়ারম্যান তার উপর বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করা শুরু করে। বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকী দেয়। এরপর থেকে পরিষদের সকল প্রকার বরাদ্দ থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। মিটিং এ হাজির হয়ে এবিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মেম্বারগণের উপস্থিততে তাকে বলেন,” আমি তোমাকে কোন কিছু দিব না। আমি তোমাকে এখন পর্যন্ত সুস্থ রেখেছি সেটাই তোমার জন্য বড় কপাল।” মেম্বারগণ এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট সাক্ষ্য দিয়েছেন।
দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীলকমল পালের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন,” অভিযান চালানো হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারবোনা।”