Pathikrit Most Popular Online NewsPaper

    প্রায় ৫শো বর্গমাইল আয়তনের নদী মাতৃক উপজেলা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর। এই উপজেলায় রয়েছে ভারত-বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমানা। এখানে জনসংখ্যা প্রচলিত অংকে বর্তমানে ৮ লাখের মতো। ভোটের রাজনীতিতে  আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ সবাই ক্ষমতাসীন জৌলুশপূর্ণ  সময় পার করেছে দৌলতপুর ভূখণ্ডে।

    বিভিন্ন সময় যারা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকের পক্ষে ভোট করেছেন, দলীয় প্রতীক ছাড়া ভোটে তারা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের মানসম্মত প্রতিনিধি যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাকেই সমর্থন করবেন, তার জন্যই ভোট চাইবেন এটাই স্বাভাবিক, ব্যাতিক্রম হলে সেটাও বাস্তবতা, কিন্তু অস্বাভাবিক বলে মনে করেছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি ওই প্রতিদ্বন্দ্বীর আত্বীয়-স্বজন-পরিবার-পরিজন, দলীয় কর্মী-সমর্থক, সাংগঠনিক ভিত্তি তো ভোটের মাঠে থাকছেই।

    কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন অনেকটাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অপ্রতিরোধ্য প্রার্থী দৌলতপুর উপজেলা যুবলীগের সফল সভাপতি, দৌলতপুরের জনপ্রিয় যুব নেতা বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী। উল্লেখ্য, টোকেন-কাদের কমিটি দৌলতপুরে যুবলীগ কে অনন্য সক্রিয় করে রেখেছে, এমন মত রাজনৈতিক অঙ্গনে পুরনো। সংগঠনের সাথে কর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে এই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সুসংগঠিত নেতৃত্ব।

    কুষ্টিয়া-১ আসন (দৌলতপুর) এর দু’বারের সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব রেজাউল হক চৌধুরীর সহোদর বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজেও একজন দক্ষ-অভিজ্ঞ ও বেশ জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে পরিচিত। ব্যাক্তি বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলে এবং তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতার মধ্যেও বিজয়ী হলে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই বলে মনে করছেন উপজেলাটির মোটাদাগের মানুষ।

    দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী। এই পদে ঘোড়া মার্কায় প্রার্থী হয়েছেন দৌলতপুর উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান। যদিও রাজনীতি কিংবা অন্যান্য গণমূখী কার্যক্রমে দৌলতপুরের মানুষের কাছে আনকোরা আনিসুর রহমান। ভোটের মাইকিং আর অল্পকিছু পোস্টারের মাধ্যমেই উপজেলাটির মানুষের পক্ষে তাকে যতটুকু চেনা সম্ভব হয়েছে ততটুকুই বলে মন্তব্য দৌলতপুরের অনেক বাসিন্দার।

    এছাড়া দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কেউ-ই প্রার্থী হননি চেয়ারম্যান পদে। এমনকি প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আফাজ উদ্দিন আহমেদ পরিবার থেকেও প্রার্থী হননি সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আইনজীবী এজাজ আহমেদ মামুন।

    প্রার্থী হতে চেয়েও ফিরে গেছেন জেলা আওয়ামী লীগের স্বনামখ্যাত নেতা, রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সদস্য আইনজীবী হাসানুল আসকার হাসু। প্রার্থী নেই দৌলতপুরে সচল রাজনীতির অন্যান্য রাজনৈতিক দল উপজেলা জাসদ এবং জাতীয় পার্টিরও কোনো নেতা-সমর্থক।

    বর্তমানে এখানে (দৌলতপুরে) আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য বড় তিনটি গ্রুপের দু’টিই সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অজ্ঞাত কারণে প্রার্থী না দিয়ে নিজেদের কর্মীদের মধ্যেও তৈরি করেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আ: কা: ম: সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ এবং আফাজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে এজাজ আহমেদ মামুন বিশ্বাস উভয়ে একসাথে চলছে ব’লে রাজনৈতিক অঙ্গনে কথা প্রচলিত থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ  নির্বাচনে সহোদর নাজমুল হুদা পটল  স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হলে, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার পদপ্রার্থী সরওয়ার জাহান বাদশাহ্’র সাথে পুনরায় বিভক্ত হোন তারা। ফের ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে এক টেবিলে বসে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা করলেও তা বাস্তবায়নে দেখা যায়নি তাদের। 

    চেয়ারম্যান প্রার্থী আনিসুর  রহমান সাবেক এমপি সরওয়ার জাহান বাদশাহ্’র আশীর্বাদপুষ্ট গুঞ্জন থাকলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষেই ভোটের মাঠে কাজ করতে দেখা যায়নি সরওয়ার জাহান বাদশাহ্কে। অন্যদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আলহাজ্ব রেজাউল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে থাকা নেতাকর্মীরা তাদের অন্যতম নেতা বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরীকে বিজয়ী করতে আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই ভোট যাত্রায় যোগ হয়েছেন দ্বিধাবিভক্ত অপর দুই গ্রুপ বাদশাহ্-মামুনের অনুকূলে থাকা অনেক নেতাকর্মীই, তারা এখন জোরেশোরে কাজ করছেন যুবলীগের সভাপতি বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরীকে বিজয়ী করার লক্ষ্য নিয়ে। 

    নির্বাচন প্রভাবমুক্ত করতে দলীয় (আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী) এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের নির্বাচনে প্রার্থী না হতে নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ভাবে আওয়ামী লীগের থাকলেও, নানা কারণে তৃণমূল পর্যন্ত তা শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি, ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচনেই সারাদেশে মন্ত্রী-এমপি’র অন্তত দশ স্বজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। 

    দৌলতপুরে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ভোট চলছে ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও নারী পদে।

    এদিকে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় সংসদ সদস্যের স্বজন ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, গেলো বারের উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা ৬০ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে পুনরায় বিজয়ী হলে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন মাত্র কয়েক হাজার ভোট। অন্যদিকে ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই একক প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী ভেড়ামারা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তিনিও হেভিওয়েট নেতাদের স্বজন। প্রথম ধাপে খোকসার নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিলো সাম্প্রতিক নির্বাচন চিত্রের চেয়ে ভিন্ন। এখানে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতার মধ্যে  চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আল মাসুম মোর্শেদ শান্ত। 

    আগামী ২১ মে দৌলতপুরের ১৪টি ইউনিয়নের ১শ’ ৪১ ভোটকেন্দ্রে ভোট দেয়ার কথা রয়েছে মোট ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৩শ’ ৯১ জন ভোটারের।  সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতিতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন সবাই।

    দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভেড়ামারা, মিরপুর, দৌলতপুর ও কুমারখালি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৪শ’ ১৯টি কেন্দ্রে ভোট দিবেন ১১ লাখের বেশি মানুষ। কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে দেখা যায়নি চিরাচরিত নির্বাচনী আমেজ।

    মিরপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা হতে পারে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা আব্দুল হালিম ও কামাল হোসেনের মধ্যে এমন গল্প এখন চায়ের কাপে। এছাড়াও প্রার্থী আছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শরীফুল ইসলাম লিটন। কুমারখালিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন  উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খান ও স্থানীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য দম্পতির ছেলে গোলাম মুর্শেদ পিটার। এখানেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের গল্প ভোটের মাঠে।

    দৌলতপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সকল কর্মীদের এক ছাতার ছায়ায় থাকতে, দৌলতপুরের উন্নয়নে অংশ নিতে আহ্বান চৌধুরী পরিবারের নেতাদের। আগামীর রাজনীতিতে কর্মীদেরও অধিকাংশের ঝোঁক ঐক্যমতে  বলে মন্তব্য অনেক রাজনীতিকের। আলোচ্য চৌধুরী পরিবারের রাজনীতি কর্মী বান্ধব রাজনীতি বলে বেশ জনশ্রুতি রয়েছে।

    বিশেষ প্রতিবেদন

    Spread the love