কুষ্টিয়া অফিসঃ
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বের কালোয়া গ্রামে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় প্রতিপক্ষের হামলায় গুলিবিদ্ধ নৌকার সমর্থক জিয়ার হোসেনের (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও সহিংসতার আশঙ্কায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। কালোয়া গ্রামের হাটবাজার ও রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। এদিকে হামলার আশঙ্কায় বাড়ি ছেড়েছেন প্রতিপক্ষের লোকজন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় ওই গ্রামে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে জিয়ারের মরদেহ গ্রামে পৌঁছায়। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় দাফনের প্রস্তুতি চলছিল।
এর আগে গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জিয়ারের মৃত্যু হয়। একই হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন নিহতের আরেক ভাই আলতাফ হোসেন। তাঁরা উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বের কালোয়া গ্রামের মৃত কেঁদো শেখের ছেলে। পেশায় দুই ভাই জেলে। সোমবার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে জিয়ারের লোকজন প্রতিপক্ষের কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কুমারখালী ও খোকসা উপজেলা নিয়ে কুষ্টিয়া–৪ সংসদীয় আসন। এই আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুর রউফ।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, বের কালোয়া গ্রামের সাবেক মেম্বর আব্দুল খালেকের সঙ্গে মৃত কেঁদো শেখের ছেলেদের প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। পদ্মানদীতে মাছ ধরা, যেকোনো নির্বাচনসহ বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক মেম্বর আব্দুল খালেক ও তার লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতীকের নির্বাচন করেছিলেন।
অপরদিকে কোঁদো শেখের ছেলেরা ও তাঁর লোকজন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছিলেন। নির্বাচনের পর গত শুক্রবার সকালে বের কালোয়ারা মোড়ে দু’পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে দুই ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এলাকাবাসী জানান, ঘটনার দিন সকালে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন তাঁরা। অতীতেও কয়েকবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের দাবি, মাঝে মধ্যেই এই দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়।
নিহতের ছোট ভাই ইয়ারুল ইসলামের দাবি, নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে ১২ জানুয়ারি সকালে সাবেক মেম্বর খালেক ও তাঁর তিন ছেলে রিপন, লিটন, শিপনসহ তাঁদের সন্ত্রাসী বাহিনী তাঁর দুই ভাইকে গুলি করে। জিয়ার মারা গেছেন। এ ঘটনায় তিনি কুমারখালী থানায় মামলাও করেছিলেন।
একাধিক গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের আশঙ্কায় এলাকায় এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতিপক্ষের অনেক লোকজন গ্রাম ছেড়েছেন। অনেকে ভয়ে দোকানও খুলছে না। বাইরে মানুষজনের উপস্থিতি কম।
দুপুরে প্রতিপক্ষের খালেক মেম্বর ও তাঁর ছেলে রিপন আলীর খোঁজে তাঁদের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌকা প্রার্থীর এক সমর্থক জানান, নিহতের পরিবার ও তাঁর লোকজন চুপচাপ রয়েছে। এখন পর্যন্ত এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, নৌকায় ভোট দেওয়ায় জিয়ারকে প্রতিপক্ষের (ট্রাক মার্কা) লোকজন গুলি করেছিল। মরদেহ ঢাকা থেকে আজ রাত সোয়া ৮টার দিকে বাড়িতে পৌঁছেছে। বাড়ির পাশের পারিবারিক গোরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, ‘এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) নিহতের পরিবার সংবাদ সম্মেলন করবে।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।