নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
২০২৪ সালের ২১ আগস্ট থেকে ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সবথেকে বেশি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এরপর থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ। অধিকাংশ পরিবার ঘর ছেড়ে আশ্রয়ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। সংকটময় এই মুহূর্তে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ বানভাসি মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পথিকৃৎ সহ ৫টি সংগঠন সম্মিলিতভাবে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
গত ২৬ আগস্ট রাতে বানভাসীদের জন্য খাদ্যদ্রব্য, বিশুদ্ধ পানি, ঔষধ, পোশাক সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সাপ্তাহিক পথিকৃৎ পরিবার, সময়ের কাগজ পরিবার, কৃষি কন্ঠ পরিবার, নিরাপদ সড়ক চাই- কুষ্টিয়া পরিবার, এপেক্স ক্লাব অফ কুষ্টিয়া পরিবার ও কলেজ মোড় দোকান মালিক সমিতি পরিবারের একাংশ কুমিল্লা ও নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ২৭ আগস্ট সকালে নোয়াখালী পৌঁছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি মোঃ শাহজাহান এর সহযোগিতায় বেশ কয়েকটি আশ্রয়ন কেন্দ্রে গিয়ে বন্যার্তদের জন্য উপহার পৌঁছে দেয় স্বেচ্ছাসেবক দলটি। দুপুরের পর কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত বেশ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে সেখানেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে স্বেচ্ছাসেবক দলটি।
দৈনিক বজ্রপাত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক, সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, সাপ্তাহিক পথিকৃৎ পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদক এ্যাড. শামিম উল হাসান অপু’র সার্বিক নির্দেশনায় ও দৈনিক সময়ের কাগজ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নূরুন্নবী বাবু, সাপ্তাহিক পথিকৃৎ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শাহারিয়া ইমন রুবেল ও দৈনিক কৃষি কন্ঠ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু মনি সাকলায়েন এলিনের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দলটিতে ছিলেন শহিদুল ইসলাম, খন্দকার সোহেল টানু, ফরহাদ হোসেন সুমন, অঞ্জন শুভ, শাহীন বিশ্বাস, আহাদুজ্জামান তন্ময়, আব্দুস সালাম সহ ১৭ জন।
উপরে উল্লেখিত পরিবারগুলো নিজ নিজ সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের শুভাকাঙ্খী মেহেরজান রেস্টুরেন্টের সত্বাধিকারী ও জেলা যুবদল নেতা ফুহাদ রেজা ফাহিম, কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সাবেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার (RMO) ডাঃ মোঃ হোসেন ইমাম, মিম ফ্যাশন এর সত্বাধিকারী সোহেল রানা, রিভার ভিউ রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী আব্দুল খালেক সহ আত্মীয় স্বজনের দেওয়া সহযোগিতাও পৌঁছে দেয় বানভাসী মানুষগুলোর হাতে। সার্বিক সহযোগিতা কারিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সেলিম বেডিং এর সত্বাধিকারী রাসেল পারভেজ।
সকল সহযোগিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সাপ্তাহিক পথিকৃৎ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শাহারিয়া ইমন রুবেল।
বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া নোয়াখালীর পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্য উন্নত হয়নি। বিদ্যুৎ না থাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যায় অনেকটা যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার ভারী বর্ষণ বন্ধ হলেও পানি আসা কমেনি। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত মানুষের কেউ কেউ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে, আবার কেউ আশপাশের ফাঁকা দালানে আশ্রয় নিয়েছে।
অনেকে অতি কষ্টে নিজ ঘরে রয়েছে, তবে ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় অন্ধকারে রাতের সাপের ভয় বিরাজ করছে। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে, মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
নোয়াখালী জেলা আবহাওয়া অধিদফতরের উচ্চপর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল ৩টা থেকে মঙ্গলবার ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে ক্রমেই ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ছে কুমিল্লা। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাই বন্যার পানিতে ভাসছে। জেলার ১২ থেকে ১৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, গরুর খামার, পোল্ট্রি খামারসহ ঘরবাড়ি।
ভয়াবহ এই বন্যায় জেলাজুড়ে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে প্রায় ১০ জনের। তাদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু। বানের পানিতে তলিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় এসব মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
উজানের পানি কাঁধে করে লোকালয়ে আনা জেলার একমাত্র নদী গোমতী। বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবাহের চার দিন পরও বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এ নদীর পানি। নিম্নাঞ্চলের লোকালয় প্লাবিত করেও ঝুঁকি কমছে না এ নদীর পানির প্রবাহে। উজানের পানি ভারত থেকে গোমতী নদী হয়ে জেলার অন্য নদী ডাকাতিয়া, সালদা এবং কাঁকড়ির প্রবাহ বাড়িয়েছে। এসব নদী ফেঁপে ওঠার পর প্লাবিত হয়েছে জেলার সিংহভাগ অঞ্চল।