নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের খাজানগরে ঈগল সমর্থিত পিতাকে পিটিয়ে ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে নৌকা সমর্থিত পুত্র ও তার অস্ত্রধারী সাঙ্গোপাঙ্গরা। আহত বকতিয়ার (৫০) কে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয়েছে কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। খাজানগর আদর্শপাড়ায় শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত ১১ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর পুত্রদের অভিযোগ নেশা থেকে ফেরাতে মাদকাসক্ত বাবাকে মারধর করেছে তারা। বাবার অভিযোগ ঈগলের পোস্টার লাগানোর কারনে তাকে মারধর ও কুপিয়েছে ছেলে ও তার অস্ত্রধারী সাঙ্গো-পাঙ্গরা। প্রতিবেশীরা বলছেন, বকতিয়ার মাদকাসক্ত কি না তা তারা নিশ্চিত নন। তবে ওই পরিবারে ঝগড়াঝাটি নতুন নয়।
আহত বকতিয়ার হাসপাতালে জানান, সে ঈগল মার্কার হ্যান্ডবিল নিয়ে এসেছিল বাড়িতে এবং খাজানগর বাজারের ঈগলের অফিসে কেন গিয়েছিল সে জন্য তার দুই ছেলে কৈফিয়ত চায়। বাপ-বেটা এ নিয়ে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে ছেলে বলে তোমাকে নৌকায় ভোট করতে হবে। না হলে তোমাকে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেবো। এ সময় বাবা উত্তেজিত হয়ে বলে আমি ঈগলে পোস্টার লাগাবো দেহি তোরা কি করোস। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুই ছেলে ফোন দিয়ে ১৫/২০ জন অস্ত্রধারী কিশোর-যুবকদের ডেকে নিয়ে আসে। তারা এসেই পিটিয়ে ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে তাকে গুরুতর জখম করে। মারধোরে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান ফেরার পর বুঝতে পারে সে হাসপাতালে।
তার প্রতিবেশীরা বলেন, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে বকতিয়ার ও তার ছেলেসহ কয়েকজন উচ্চস্বরে বাকবিতণ্ডা করছিল। পিতা-পুত্র কেউ ভালোনা, ওই পরিবার টা খুব খারাপ। ওদের বাপ-বেটার মধ্যে এমন ঝগড়াঝাটি প্রায়ই হয়ে থাকে, যে কারনে প্রথমে কেউ তা আমলে নেয়নি। কিছুসময় পর ছেলে ফোন দিলে বাটাম ও হাত কুড়াল নিয়ে সেখানে হাজির হয় আরো ১২/১৫ জন কিশোর যুবক। তখন শোরগোল আরো বেড়ে যায় এবং বকতিয়ারের আত্মচিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় বকতিয়ারকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। তবে বকতিয়ার মাদক সেবন করেন কিনা সে প্রশ্নে কয়েক জন প্রতিবেশী বলেন, এটা তারা নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না।
ছিন্ন ফকির নামে এক ব্যক্তি বলেন, বকতিয়ার ঈগল মার্কার ভোট করছিল, এ ব্যাপারে খাজানগর উত্তরপাড়া ও কাতলমারীর কিছু ছেলেপেলে এসে কয়, বকতিয়ার তোর নৌকার ভোট করা লাগবো। বকতিয়ার বলে আমি নৌকার ভোট করতে পারবো না। এই নিয়ে বিতর্কে বকতিয়াররে চাইনিজ কুড়াল ও বাটাম দিয়ে মারছে।
খাজানগর বাজারে নির্বাচনের ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা সুমনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গতরাতে তার নির্বাচনী ক্যাম্প ভেঙে দেয়া হয়েছে। বকতিয়ারকে আহত করে হাসপাতালে পাঠানোর পর ঈগলের নির্বাচনী ক্যাম্প ভেঙে দেয়। তবে কারা ভেঙেছে সেটা সে নিশ্চিত নয়। সে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে জানতে পারে তার নির্বাচনী ক্যাম্প ভেঙে দিয়েছে। আমার শক্তিশালী কোনো কর্মী নেই, তাই ওদের (নৌকার সমর্থকদের) প্রতিবাদ করার ক্ষমতাও নেই বলে জানান।
ঘটনার পর পরই স্থানীয় চেয়ারম্যান মিন্টু ফকির এর বাড়িতে বকতিয়ার এর দুই ছেলে আকাশ ও শাকিল একটি পেজে লাইভে যুক্ত হয়ে বলেন, তার বাবা একজন মাদকাসক্ত, সব ধরনের নেশা করে তাই তাকে মারধোর করা হয়েছে। আমাদের বিচার কেউ করেনা।
বড় ছেলে আকাশ বলেন, আমি কিছু জানি না, আমি মারামারির পরে এসেছি, এর পরবর্তীতে আকাশ আবার বলেন, ঘরে ঢুকছি আমার কলার ধরছে আমিও মারছি। আমার গেট আটকানো ছিল পরে আমি ওদের ডাক দিয়েছি ওরা গিয়ে মারধর করেছে পিটিয়েছে।
এবিষয়ে জানতে বটতৈল ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্টু ফকির এর মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, বাবা ও ছেলে দু’জনই মাদকাসক্ত। ছেলেরা ২/৪ জন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বাবার উপর চড়াও হয়ে ছোট ছেলে বাবাকে বঁটি দিয়ে কোপ দেয়। পরে এবিষয়ে কেউ কেউ রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।