Pathikrit Most Popular Online NewsPaper

    নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

    কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া পশুহাট উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে প্রকল্পের কোটি টাকা হরিলুট করা হয়েছে। তথ্য চাওয়া হলে উপজেলা প্রকৌশলী গড়িমসি করেছেন, এমনকি প্রতিবেদককে ‘ম্যানেজ’ করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রকল্পের তথ্য জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তথ্য প্রাপ্তির আবেদন করা হলে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আরিফ উদ্দৌলা প্রাথমিকভাবে তথ্য দিতে টালবাহানা করেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদককে ‘ম্যানেজ’ করার পরামর্শ দেন বলে চেয়ারম্যান প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান। পরে ইউএনও’র নির্দেশে উপজেলা প্রকৌশলী তথ্য প্রেরণ করলেও সেখানে চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ব্যাপক গরমিল পাওয়া যায়। উপজেলা প্রকৌশলীর তথ্য অনুযায়ী, পশুহাটের চারপাশে বালি দিয়ে ভরাটের জন্য ৮ লাখ টাকার চারটি প্রকল্প এবং ১৯ লক্ষ ৭৯ হাজার ৩১৩ টাকার দুটি প্রাচীর নির্মাণ প্রকল্প ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাস্তবায়িত বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান জানান, এসব প্রকল্প ২০২২-২৩ বা তার আগের অর্থবছরের। তিনি আরও বলেন, ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোনো প্রকল্পের বরাদ্দ পাননি। এদিকে, উপজেলা প্রকৌশলী নিশ্চিত করেছেন, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোনো কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া, কিছু প্রকল্পের তথ্য গোপন করার অভিযোগও উঠেছে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পশুহাটের পূর্বপাশে সামান্য বালু ফেলা হয়েছে। পূর্ব-দক্ষিণ পাশে দুটি জায়গায়ও অল্প পরিমাণ বালু ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি জায়গা ব্যক্তি মালিকানাধীন, যেখানে জমির মালিক নিজ খরচে বালু ফেলেছেন বলে দাবি করেন। অন্য জায়গায় ফেলা বালুর পরিমাণও নগণ্য। প্রাচীর নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান ও সদস্যদের যোগসাজশে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে আরও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে, যার তথ্য গোপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয়রা জানান, বালিয়াপাড়া পশুহাটের কোনো কাজই সঠিকভাবে হয় না। প্রতিটি কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহৃত হয়। ফেলা বালুর পরিমাণ এত কম যে, তার মূল্য দুই লাখ টাকাও হবে না। প্রাচীরের কাজ অসমাপ্ত, এমনকি রড চুরির ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “প্রাচীরের কাজ শেষ হবে কি-না, তাও নিশ্চিত নয়। পূর্ব-দক্ষিণ পাশের একটি জায়গা ব্যক্তি মালিকানাধীন, সেখানে জমির মালিক নিজেই বালু ফেলেছেন।”

    ১৫ নং কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিচুর রহমান প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, চলমান কাজ ২০২২-২৩ বা তার আগের অর্থবছরের। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কোন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তাছাড়া কাজে অনিয়মের কথা তিনি অস্বীকার করেন।

    উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আরিফ উদ্দৌলার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকনুজ জামান প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, “তথ্য গোপন বা ভুল তথ্য দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ এমন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

    বালিয়াপাড়া পশুহাট উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের এই অভিযোগ স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। প্রকল্পের তথ্যে অসঙ্গতি, নিম্নমানের কাজ এবং তথ্য গোপনের অভিযোগ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র উদঘাটন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।

    Spread the love