Pathikrit Most Popular Online NewsPaper

    নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

    কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের ওপর হামলা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

    বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের এম.এ. রাজ্জাক মিলনায়তনে ভুক্তভোগী পরিবার এ সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক সায়াদ ইসলাম শ্রেষ্ঠ ও পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা।

    এর আগে গত শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বরে পিঠা উৎসবে কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও মারপিটের অভিযোগে ১৫ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার যুগ্ম আহ্বায়ক সায়াদ ইসলাম শ্রেষ্ঠ বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ৮ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০/৩০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

    এই মামলা প্রত্যাহার ও প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন মামলার আসামি এস এ এম সাদিকের মামা কে এম জাহিদ।

    তিনি বলেন, গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া পৌরসভা প্রাঙ্গণে নারী উদ্যোক্তা ইউনিয়ন আয়োজিত উদ্যোক্তা ও পণ্য মেলায় কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল ছেলে মেলায় ঘুরতে আসা মেয়েদের উত্যক্ত ও বেলুন ফোটানোর নামে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে। তাদের মাঝে সায়াদ ইসলাম শ্রেষ্ঠ পূর্বেও ছাত্রলীগ পরিচয়ে এমন ঘৃণ্যকাজে সংযুক্ত থাকায় সাদিকসহ স্থানীয় ছেলেরা এর প্রতিবাদ জানায়। সায়াদ ইসলাম শ্রেষ্ঠসহ উত্যক্তকারী ছেলেরা নিজেদের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে হুমকি দেওয়ার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের হস্তক্ষেপে সাময়িক ভাবে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেও উত্যক্তকারীরা নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে বাইরে থেকে আরো অনেকজনকে ডেকে মহড়া দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সাদিকসহ প্রতিবাদকারী কয়েকজনকে মারার চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়জন আহত হয়। উপস্থিত জনসাধারণের সরব ভূমিকায় পরিবেশ শান্ত হলে দুপক্ষ স্থান ত্যাগ করে। কিন্তু পরবর্তীতে রাত ৯টা ১৫ মিনিটে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করেছে এমন গুজব ছড়িয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম নিয়ে মব জাস্টিসের নাটক সাজিয়ে সাদিক, প্রেমসহ অনেকের বাসায় হামলা চালানো হয়। তাদের বাসায় না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। উক্ত ঘটনার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। তাদের এই অপকর্মের ভিডিও ধারণকালে স্থানীয়দের অনেকেরই মোবাইল তারা ছিনতাই করার চেষ্টা করে। সাদিকের বাবা অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ জানালে তাকে অপদস্থ করা হয় ও পরদিন সাদিক, প্রেমসহ তাকেও মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে আটক করা হয়। ছাত্রলীগের তকমা দিয়ে মব জাস্টিসের চেষ্টার অভিযোগ তুলে তিনি আরও বলেন, শুধু ইগো আর ক্রোধের কারণে সাদিকের বড় ভাই (সাবির) ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিল বলে গুজব ছড়িয়ে মবকে উস্কে দেওয়ার ভয়ংকর ষড়যন্ত্র করে সায়াদ ইসলাম শ্রেষ্ঠ। অথচ সাদিক-সাবির দুই ভাইয়ের কেউই রাজনীতিতে যুক্ত নয়। বরং সাদিক, প্রেম, আমির হামজা ও তাদের বন্ধুরা জুলাইয়ের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল যা সবাই জানে। সাদিকের বড় ভাই সাবিরকে টেনে হিচড়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতে থাকলে এলাকাবাসী প্রতিরোধ করে।

    তিনি আরও বলেন, প্রেমকে ছাত্রলীগ পরিচয়ে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে তার বাসায় আক্রমণ করা হয়। কিন্তু এই প্রেম ছেলেটাই গত আগস্টের ৪ তারিখ এবং ৫ তারিখে ছয় রাস্তার মোড়ে সকলকে আন্দোলনের উদ্দেশ্য একত্রিত করে এবং আওয়ামী লীগের আক্রমণের শিকার হয় এবং এসময় প্রেম নিজে পুলিশের গুলিতে আহত হয়। আগস্টের ৭ তারিখ থেকে প্রেম রাস্তায় ট্রাফিকের কাজে নিয়োজিত ছাত্রদের খাবার বিতরণ করে। প্রেম এবং সাদিক কেউই ছাত্রলীগের সাথে সঙ্গে জড়িত না। প্রেম কুষ্টিয়া ছয় রাস্তার মোড়ে এবং সাদিক ঢাকা সাইন্স ল্যাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যোদ্ধা, যার তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, সায়াদ ইসলাম শ্রেষ্ঠ একসময় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল ও বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ পরিচয়ে অপকর্মে লিপ্ত ছিল। যার বিভিন্ন প্রমাণ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। কুষ্টিয়া কুমারখালীর সাবেক এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ এর ঘনিষ্ঠ সহকারী হিসাবে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে লিপ্ত ছিল। এবং হরিপুর ইউনিয়নের সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মী ছিল সে।লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবী করেছে মেলায় কোন নারী ছিল না। অথচ মেলার আয়োজক ছিল নারী উদ্যোক্তা ইউনিয়ন।

    মামলার এজাহারে তারা উল্লেখ করেছে অনুষ্ঠানের পর তারা বেলুন ফাটাফাটি খেলছিল, অতিথি হয়ে বেলুন ফাটাফাটি খেলার কথা হাস্যকর। প্রকৃতপক্ষে বেলুন দিয়ে বিভিন্ন অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও ইভটিজিংয়ের কারণেই তাদের সাথে স্থানীয়দের কথা কাটাকাটি হয়। পরে মোস্তাফিজুর রহমান ও সায়াদ শ্রেষ্ঠর নেতৃত্বে সাদিকের বাসায় হামলা চালানো হয় ও তার বাবাকে অপদস্থ করা হয়। অথচ এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে তার বাবা নাকি সশরীরে দাঁড়িয়ে থেকে মারার নির্দেশনা দিয়েছিল। মামলায় অনেকের নাম রয়েছে যারা ওইসময় পৌরসভা প্রাঙ্গণেই উপস্থিত ছিল না।ইভটিজিংয়ের বিরোধিতা করায় কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তিকে ছাত্রলীগ কর্তৃক হত্যা চেষ্টা নাম দিয়ে গুজব ছড়িয়ে অপকর্ম ঢাকা এবং রাজনৈতিকভাবে লাভবানের জন্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঘৃণ্য মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। তারা তাদের কমিটিকে বিতর্কিত করতে পিছন থেকে বিভিন্ন মহলের ইন্ধনের কথা বলে সহযোদ্ধাদের কলংকিত করার চেষ্টা করেছেন। দেশের প্রয়োজনে ভাই হত্যার প্রতিবাদ জানাতে জুলাইয়ের আন্দোলনে সাদিক ও তার বন্ধুরা অংশগ্রহণ করলেও তাদের কেউ কমিটিতে যুক্ত হতে আগ্রহী নয়। বরং মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে ও হত্যা চেষ্টার নাটক সাজিয়ে সকলের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার মাধ্যমে নিজেদের অপকর্ম আড়াল করা এবং এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা পাওয়ার ঘৃণিত নাটক জুলাইয়ের সহযোদ্ধাদের মর্মাহত করেছে।

    লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়েছে, প্রশাসনের প্রতি আকুল আবেদন, তিলকে তাল করার ষড়যন্ত্রের বলি যাতে নিরীহ ছেলেরা না হয়। সন্তানের প্রতি একদল ইগোইস্টিক জালিমের অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কোন পিতাকে যাতে জেল জুলুম সহ্য করতে না হয় এই নতুন বাংলাদেশে, এই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একই সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করা সকলের প্রতি অনুরোধ, কতিপয় জালিমদের রক্ষাকর্তা না হয়ে মজলুমদের পাশে দাঁড়ান।

    এ সময় উপস্থিত ছিলেন- মামলার আসামি আমির হামজার বাবা আব্দুর রহিম, শাহারিয়ারের বাবা এ্যাড. আব্দুর রশিদ, এস এ এম সাদিকের মামা কে এম জাহিদ, প্রেমের মা সাইমা আক্তার বাসনা ও সিয়ামের ফুপ্পা জয়নাল আবেদিন। তারা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

    এরপর তাঁরা প্রজেক্টর এর মাধ্যমে বিভিন্ন ডকুমেন্টস তুলে ধরেন।

    এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন আমি একটা মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। পরে বিস্তারিত জানতে পারবো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার নেতারা বলেন, সংবাদ সম্মেলন করে আসামির পরিবারের সদস্যরা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া শহরের কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বরে পিঠা উৎসবে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক সায়াদ ইসলাম শ্রেষ্ঠ, মুখ্য সংগঠক এম ডি বেলাল হোসেন বাঁধনসহ কয়েকজন। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মী ও কিশোর গ্যাং বাহিনীর সদস্যরা অতর্কিত হামলা চালায়। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ সময় হামলাকারীদের হাতে অস্ত্র ছিল। হামলা করে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। আমরা পুলিশকে অভিযোগ জানিয়েছি। মামলা দায়ের করেছি। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বরে ছাত্রলীগের কর্মীরা ও কিশোর গ্যাং বাহিনীর সদস্যরা মুস্তাফিজ, শ্রেষ্ঠ, বাধন সহ ছাত্রনেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে আসামিদের পরিবারের সদস্যদের তোলা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

    Spread the love