Pathikrit Most Popular Online NewsPaper

    একপাশে অটোরিকশা স্ট্যান্ড অপরপাশে হাট বাজার: ছবিঃ পথিকৃৎ

    শাহারিয়া ইমন রুবেলঃ
    কুষ্টিয়া শহরের অন্যতম প্রধান প্রবেশ দ্বার মজমপুর গেট। এই মজমপুর দিয়ে শহরে প্রবেশের পাশাপাশি ঢাকা, পাবনা, মেহেরপুর, রাজশাহী, রংপুর সহ উওরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটের দূরপাল্লার পরিবহন এবং ছোট বড় নানান ধরনের যান চলাচল করে থাকে। তাছাড়া মজমপুর গেটের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত আন্তঃনগর ট্রেন সহ লোকাল ট্রেনও চলাচল করছে।
    ব্যস্ততম এই সড়কে এমনিতেই গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে রেলগেট। তার উপর মজমপুর এলাকার মহাসড়কের বড় দখল করে একপাশে অটো রিকশা স্ট্যান্ড ও ওপর পাশে বসানো হয়েছে হাঁটবাজার। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীরা। দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
    ২০২১ সালের মহাসড়ক আইন অনুযায়ী- মহাসড়কের ওপর বা নিয়ন্ত্রণ রেখার মধ্যে হাটবাজারসহ কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। কিন্তু বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কুষ্টিয়া পৌরসভা মহাসড়কের ওপর এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার মধ্যে হাটবাজার বসিয়েছে। মজমপুর দাদাপুর সড়কে সন্ধ্যাকালিন বাজার হিসেবে ১ বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় ইজারা দিয়েছে কুষ্টিয়া পৌরসভা।
    মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ রেখা কতটুকু তা ২০২১ সালের মহাসড়ক আইনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। সেখানে বলা হয়েছে, মহাসড়কের দুই পাশের ভূমির প্রান্তসীমা থেকে ১০ মিটার বা সরকার কর্তৃক গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্ধারিত রেখাই হবে নিয়ন্ত্রণ রেখা।
    মহাসড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ সম্পর্কিত একটি উপধারায় বলা হয়েছে- সরকারের অনুমোদন ব্যতীত মহাসড়কের সংরক্ষণ রেখার মধ্যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ, হাটবাজার বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মহাসড়কের কোনো অংশ ব্যবহার করা যাবে না। এদিকে গত ১৬ জানুয়ারি জনসাধারণের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে সারাদেশে মহাসড়কের লাগোয়া হাটবাজার ও স্থাপনার পাশাপাশি নসিমন-করিমনের মত যানবাহন তিন মাসের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
    সেই সঙ্গে এসব হাটবাজার, স্থাপনা ও নসিমন-করিমনের মত যানবাহন অপসারণে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। এক আইনজীবীর করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর বেঞ্চ ১৬ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) এ রুল জারি করে। জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম বদরুল ইসলাম। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনাকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহাসড়কে হাটবাজার ইজারা প্রদান করেছে কুষ্টিয়া পৌরসভা।
    সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা হয় রাকিব নামের পথচারীর সাথে। তিনি বলেন, সড়ক প্রস্তুত করে আমাদের কোন লাভ হয়নি। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করি। শুধু শুধু সরকার সড়ক প্রসস্থ করে টাকা নষ্ট করছে। একদিকে এখানে রেল গেট পড়লে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয় অপরদিকে অটোরিকশা স্ট্যান্ড ও হাটবাজার বসায় সড়ক আরো সংকোচিত হয়ে পড়েছে। এই মজমপুর থেকে হাটবাজার ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড সরানো অতি জরুরী। সেই সাথে ফুটপাত দখলমুক্ত করা দরকার। আস্তে আস্তে মজমপুর জমপুরে পরিনত হচ্ছে বলেও উক্তি করেন তিনি।
    কুষ্টিয়া জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুল আলম বলেন- মজমপুর গেটের একপাশে হাটবাজার ও একপাশে অটোস্ট্যান্ড হওয়ায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়গুলো তুলে ধরি। এরপর মাঝে মাঝে প্রশাসন তৎপর হলে কিছুটা ঠিক হয় আবার প্রশাসন চলে গেলে যা তাই হয়ে যায়। তবে জরুরী ভাবে মজমপুর গেট থেকে বাজার তুলে দেওয়া দরকার।
    নিরাপদ সড়ক চাই কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি কেএম জাহিদ জানান, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি। সড়ক প্রস্তুত করা হয়েছে তবে এর ফল পথচারীরা ভোগ করতে পারছে না। কুষ্টিয়া মজমপুর হাইওয়ে সড়কের উপর থেকে হাটবাজার ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড না সরালে যেকোনো সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যতদ্রুত সম্ভব সড়কের উপর থেকে হাটবাজার ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড সরাতে হবে।
    কুষ্টিয়া হাইওয়ে থানার সাব-ইন্সপেক্টর জয়ন্ত জানান, আমরা সড়কে জনসাধারণের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করি। সর্বশেষ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভাদালিয়া বাজারে ও বিত্তিপাড়া বাজারে অভিযান চালানো হয়। আমাদের এই অভিযান চলমান রয়েছে। তবে পৌর এলাকার মধ্যে আমরা প্রবেশ করি না এটা ট্রাফিক বিভাগ দেখাশোনা করে।
    ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (সদর ট্রাফিক) কুষ্টিয়ার ফকরুল আরেফিন জানান, মজমপুর গেটের বাজারের জায়গাটি নিয়ে রোডস এন্ড হাইওয়ে ও পাবলিকের মধ্যকার মামলা চলমান রয়েছে। বাজার ইজারাদারেরা আমাকে পৌরসভার ইজারার কাগজ দেখিয়েছে। অটো ও সিএনজি স্টান্ড ভাসমান। এই যানবাহনগুলো যেভাবে রাখার দরকার আমরা সেভাবে রাখতে পারিনা। আর যেই যানবাহনগুলোর লাইসেন্স নাই সেই যানবাহন গুলো আমরা আটক করে থাকি। কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দিন বলেন- মজমপুরে অনেক আগে থেকেই সন্ধ্যাকালিন বাজার বসত। আমরা সকল কাউন্সিলদের নিয়ে মাসিক মিটিং করে এই বাজার ইজারা দিয়েছি। যদি আইনের বাধ্যবাধকতা থাকে তবে আর ইজারা দেবো না। আপনি এ বিষয়টি নিয়ে মেয়র মহোদয়ের সাথে কথা বলেন।

    সড়ক ও জনপথ বিভাগ, কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন- সড়কের উপর বাজার বসে আমি জানি। সড়ক বিভাগ ও বিটিসিএল এর মধ্যে জমির মাপযোগের সমস্যা রয়েছে। সড়কের উপর স্থায়ী ব্যবস্থাপনা করা অপরাধ কিন্তু অস্থায়ী ব্যবস্থাপনা হলে তো কিছু করার থাকেনা। সব থেকে বড় বিষয় হলো জমির মালিকানা নির্দিষ্ট হলে তারপর আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

    Spread the love