
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১ নম্বর ত্রিবেণী ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সুমাইয়া তাবাসসুম (তমা)-এর বিরুদ্ধে সরকারি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা নিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জনগণ ও একাধিক সুবিধাভোগীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, মাতৃত্ব, বয়স্ক, বিধবা ভাতা, ভিজিএফ ও ভিজিডি—যে সকল ভাতা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করার সরকারি নিয়ম রয়েছে, সেগুলো নিতে ৩ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত ‘সেবা মূল্য’ হিসেবে দাবি করা হয়। যথাযথ টাকা না দিলে তালিকায় নাম ওঠানো হয় না বলে অভিযোগ সুবিধাভোগীদের।
সুবিধাভোগীদের অভিযোগ:
“টাকা না দিলে নাম ওঠে না” ত্রিবেণী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে কথা বলা হলে বহু মানুষ একই ধরনের অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী বলেন, “সরকার তো এসব ভাতা বিনামূল্যে দেয়। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদে গেলে বলা হয় টাকা ছাড়া নাম তালিকায় উঠবে না। বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়।”
আরেকজন নারী সুবিধাভোগী জানান, ভিজিডি কার্ডের তালিকায় নাম তুলতে তার কাছে কয়েক হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল। তার ভাষায়, “আমি টাকা দিতে না পারায় প্রথমবার তালিকায় আসেনি। পরে অনেকেই টাকা দিয়ে কার্ড পেয়েছে। টাকা না দিলে নামই ওঠে না।”
স্থানীয় কৃষক হাফিজুল ইসলাম বলেন, “এখানে নিয়মের চেয়ে টাকা বেশি কার্যকর। কার্ড নিতে হলে ইউনিয়ন পরিষদে দালাল আর কর্মচারীদের ধরণা দিতে হয়।”
সামাজিক কর্মীদের অভিযোগ:
“বছরের পর বছর একই অনিয়ম চলছে”ত্রিবেণী ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম চলছে বলে দাবি করেন স্থানীয় সামাজিক কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, ইউনিয়নের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে দালালচক্র সক্রিয় এবং এদের পেছনে কিছু কর্মচারীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা রয়েছে।
একজন সামাজিক কর্মী বলেন, “ভাতা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ বহু পুরানো। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে পারে না—কারণ ভাতার আশায় তারা নীরব থাকে।”
ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থান:
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ১ নম্বর ত্রিবেণী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাফুজা খাতুন স্পষ্টভাবেই জানান “সরকার সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সব ভাতা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেয়। কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই। ইউনিয়ন পরিষদের কেউ যদি টাকা নিয়ে থাকে, প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সুবিধাভোগীদের উচিত, যেকোনো অনিয়ম দেখলে সরাসরি আমার কাছে অথবা ডিজিটাল সেন্টারে অভিযোগ করা।”
অভিযুক্ত কর্মচারীর বক্তব্য:
অভিযোগ বিষয়ে জানতে ফোন দিলে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সুমাইয়া তাবাসসুম (তমা) অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন—“আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। আপনারা যা ইচ্ছে লিখুন।”তার বক্তব্য স্পষ্ট হলেও অভিযোগকারীরা দাবি করছেন, সুষ্ঠু তদন্ত হলেই সত্যতা প্রমাণিত হবে।
স্থানীয়দের দাবি:
ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত হোকনাগরিক সমাজ, সামাজিক কর্মী এবং সুবিধাভোগীরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন—এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জরুরি তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। তাদের মতে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষদের জন্য ভাতা দেওয়া হয়; সেখানে ঘুষ বন্ধ করা গেলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা সত্যিকার অর্থে সুবিধা পাবেন।
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাস্তবতা:
বাংলাদেশ সরকার বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, মাতৃত্ব, ভিজিএফ-ভিজিডি সহ বিভিন্ন ভাতা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেয়। সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যে—তালিকা প্রণয়ন হবে স্থানীয় পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করেকোনো ধরনের টাকা নেওয়া যাবে নাঅনিয়ম পেলে প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেকিন্তু মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা অনেক সময় ভিন্ন হয়ে দাঁড়ায়। দালাল ও কিছু অসাধু কর্মচারীর কারণে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হন।