কুষ্টিয়া অফিস:
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের হাউসপুর গ্রামের কে,এইচ,এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে আরএইচআরবি (জঐজই) সততা ব্রিকস সহ ৩ টি অবৈধ ইটভাটা। ইটভাটার দূষিত কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে ওই স্কুলের ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী সহ প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী। এছাড়াও অতিরিক্ত ধূলার উপদ্রবে শ্রেণিকক্ষে বসতেও সমস্যা হয় তাঁদের। এবিষয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হলেও নামমাত্র জরিমানা ও মুচলেকায় বীর দর্পে চলছে এই অবৈধ ইটভাটাগুলো। ইতিপূর্বে আরএইচআরবি সততা ব্রিকস ইটভাটার পরিচালক জুয়েল রানা হিরা তার এক বক্তব্যে দাবি করেন, সমিতির মাধ্যমে ডিসি-এসপি কে ম্যানেজ করে চালানো হয় তার ইটভাটা। এরপর টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। তৎকালীন মিরপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হারুন অর রশিদ আরএইচআরবি সততা ব্রিকস ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান পরিচালনা করেন। ওই ভ্রাম্যমাণ আদালতে ভাটা কর্তৃপক্ষ দুই লক্ষ টাকা জরিমানা ও ৩০ নভেম্বর ২০২৩ এর মধ্যে ইটভাটা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার মুচলেকা দিয়ে কোনমতে রক্ষা পায়। কিন্তু মুচলেকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার প্রায় দুই মাস পূর্ণ হতে চললেও ভাটার কোনপ্রকার নড়াচড়া লক্ষ্য করা যায়নি। বরং স্কুলের কোল ঘেঁষেই আরও পূর্ণ উদ্যমে চলছে ওই ইঁট ভাটা। এতে করে ওই স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে চলছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই হাঁপানি,শ্বাসকষ্ট ও এলার্জির মতো অসুখে ভুগছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেএইচএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক জানান, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটিতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩শ শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু স্কুলের ঘা ঘেঁষে গড়ে উঠা আরএইচআরবি (সততা ব্রিকস) সহ তিনটি ইঁট ভাটার ধুলাবালি, কালো ধোঁয়া, ইট পোড়ার তীব্র গন্ধে শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্ট, এলার্জিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ইতোপূর্বে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর মিরপুর উপজেলার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হারুন অর রশিদ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করলে ৩০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখের মধ্যে ভাটা অপসারণ করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার মুচলেকা দেন ভাঁটা মালিক। কিন্তু মুচলেকার মেয়াদ শেষ হলেও ভাটা স্কুলের গা ঘেঁষেই রয়ে গেছে। স্কুলটির সীমানা মধ্যে ভাটার পুকুর চলে এসেছি। এই স্কুলের প্রায় ৩৬ ফুট জায়গা গিলে নিয়েছে পুকুরটি।
মিরপুর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জয়নাল আবদীন এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ইউএনও স্যারের সামনে আছি। এখনি স্যারকে জানাচ্ছি।
এবিষয়ে আরএইচআরবি (সততা ব্রিকস) এর পরিচালক জুয়েল রানা হীরার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে কোন বক্তব্য দিতে পারবোনা। সবাই যেভাবে ভাটা চালাই আমিও সেই ভাবে ভাটা চালাচ্ছি।
এবিষয়ে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী বায়োকেমিস্ট্রি (পরিদর্শক) নরেশ চন্দ্র বিশ্বাস এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি তথ্য দিলেন। অচিরেই মোবাইল কোর্ট চালু হবে। স্যার ঢাকা আছেন, স্যার এলেই এই তালিকা স্যারের কাছে দেবো। স্যার হয়তো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হারুন অর রশিদ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই ইটভাটা কার্যক্রম চালাচ্ছে এটা আপনার কাছ থেকে জানলাম। আমি বিষয়টি দেখব। প্রয়োজন বোধে আবারো মোবাইল কোর্ট বা আইনগত যা যা করণীয় করব।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহুরুল ইসলাম এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি বললেন আমি অবহিত হলাম। দেখি আমি এইটা খোঁজ নিচ্ছি।
পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগ কার্যালয়ের পরিচালক (উপসচিব) ইকবাল হোসেন এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি পুরো ঠিকানা লিখে পাঠান, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।