ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
প্লেটে নান্দনিক ভাবে সাজানো রয়েছে পিঠা। সবাই হাত বাড়িয়ে নিচ্ছেন পিঠা। হরেক রকম পিঠার স্বাদে মুগ্ধ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অতিথি ও দর্শনার্থী। বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু সরকারি লালন শাহ কলেজে হয় এই আয়োজন। কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্টলে সাজিয়ে ছিলেন পিঠা। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক ক্রীড়া ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার শেষ দিনে বাড়তি আকর্ষণ ছিল এই পিঠা উৎসব।
আনোয়ার সাদাত উপম নামে দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নানান রকম পিঠার পসরা সাজিয়েছেন তাদের ‘নকশী পাকান’ নামের স্টলে। তার সাথে রয়েছেন সহপাঠী রবিউল ইসলাম, শিমুল হোসেন, রাফিন, সামান্তা, ফারজানা, নাসরিন, ঊষা, জেসিকা তন্ময়, ওভিসহ আরও অনেকে। তাদের স্টলে রয়েছে ইলিশ পিঠা, নকশী পিঠা, ভাপা, ছাঁদ পিঠা, শামুক পিঠা, পাটি সাপটা, শরিষা ভর্তা, গ্রিল, মালাই রোলসহ ২৫ রকমের পিঠা। রাত জেগে পরিবার ও বন্ধুরা বানিয়েছেন এ সব হরেক রকমের পিঠা।
আনোয়ার সাদাত বলেন, রাত জেগে মায়ের সাথে তিনি ৩ রকমের পিঠা বানিয়েছেন। শিক্ষা জীবনের প্রথম পিঠা উৎসব তাই এটি তার মাঝে একটি আলাদা অনুভূতি ও আবেগের সৃষ্টি হয়েছিল। সহপাঠী, সিনিয়র শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথিদের পিঠা খাইয়েছেন এবং নিজেরাও খেয়েছেন। তারা খুবই আনন্দিত।
বাউল সাধক লালন শাহের জন্মভূমি হরিণাকুণ্ডু। তাঁরই নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কলেজটি। এবারের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিল একক অভিনয়, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুল সংগীত, লালন গীতি, দেশের গান, হামদ-নাতসহ বিভিন্ন লোকজ গান। আরও ছিল কবিতা আবৃতি, কুইজ, জ্হান-জিজ্ঞাসাসহ মনমাতানো নানান সব আয়োজন। আর ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিল দৌড়-ঝাপ, চাতকি ও বর্ষানিক্ষেপ।
স্নাতক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা নকশী পাকান, লবঙ্গ লতিকা, চিনিযুক্ত কেক, রসমঞ্জুরী, পিঠা বিলাশ, পিঠা বাজার, পৌষালি পর্বণ, রসের হাড়ি, পিঠা পার্বণ নামের নয়টি ষ্টলে ৮৫ রকমের পিঠার সমাহার সাজিয়ে ছিলাম। এসব পিঠার মধ্যে ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, রাজদুলালি, চিতই, দুধ পায়েস, জামাই পিঠা ,চাঁদ পিঠা, সিমপিঠা, পানপিঠা, বকুলপিঠা, ফুলপিঠা, কদমপিঠা, দুধ গোলাপসহ বাহারি নামের হরেক রকমের পিঠা।
লিমা নামে বাংলা বিভাগের আরও এক শিক্ষার্থী জানান, বান্ধবীদের সাথে রাত জেগে তারা প্রায় ১০ রকমের পিঠা বানিয়েছেন। তাদের মায়েরা এসব পিঠা বানাতে সহযোগিতা করেছেন।
পিঠা মেলায় আয়োজকদের এক জন কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মহব্বত আলী। তিনি জানান, প্রতি বছর এই উৎসব হয়। এসময় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অতিথিদের মাঝে একধরণের মিলন মেলার সৃষ্টি হয়। এবার নয়টি স্টলে শিক্ষার্থীরা সারি সারি সাজিয়েছে হরেক রকমের পিঠা। গোটা অনুষ্ঠান ছিল নান্দনিক ও উৎসব মূখর।
উৎসবে শিশু সন্তানকে নিয়ে এসেছেন সুনিতা কর্মকার নামে এক নারী। তিনি বলেন, কলেজের পাশদিয়ে যাওয়ার সময় এই উৎবে আসেন। এখানে এসে তার ছোট বেলার মা-দাদিদের পিঠা বানানোর কথা মনে পড়ে যায়। বিভিন্ন স্টল থেকে তিনি কয়েক রকমের পিঠা কিনে খেয়েছেন। গ্রামের হারিয়ে যাওয়া অনেক পিঠার সঙ্গে এই উৎসব নতুন করে তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বলেও তিনি জানান।
উৎসবের প্রদান পৃষ্ঠ পোষক ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শরিফুজ্জামান বলেন, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং পিঠা উৎসবে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত এবং নতুন প্রজন্মকে বাঙালিয়ানার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই উৎসব। এটি করতে পেরে আমরা আনন্দিত। তিন দিনের এই আয়োজন ছিল উৎসব মূখর।