নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
হালসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির গুঞ্জনের মধ্যেই ৭ বস্তা বই চুরি করেছে আলমাস ও মিলন নামে অত্র বিদ্যালয়েরই দুই পিয়ন। পরে চুরির বিষয়টি জানাজানি হলে স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এরপর তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বই চুরির বিষয়টি স্বীকার করে বলে জানা যায়। এছাড়াও বিদ্যালয়ের সভাপতির বক্তব্যে চুরির মদদদাতা হিসাবে উঠে এসেছে সহকারী প্রধান শিক্ষকের নাম।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১:১৫ টার দিকে হালসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বই চুরির এই ঘটনাটি ঘটে।
জানা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আলমাস ও মিলন কাউকে না জানিয়ে বিদ্যালয়ের অফিসের তালা খুলে ৭ টি বস্তায় বই ভরে একটি ভ্যানে করে নিয়ে যায় । এই ৭ বস্তা বই ছাড়াও সপ্তাহ খানেক আগে আলমাস আরও ২/৩ বস্তা বই চুরি করে বিক্রি করেছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করে। এছাড়াও বই চুরির ঘটনায় অপর অভিযুক্ত পিয়ন মিলন গত বছরের ১২ অক্টোবর বিদ্যালয়ের বেঞ্চ চুরি করে ধরা পড়েছিল। সেসময় তাকে বেঞ্চ চুরির দায়ে ১৫ দিনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল।
একটি ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যায়, প্লাস্টিকের ছয়টি সাদা ও একটি হলুদ মোট সাত বস্তা বই বোঝাই ভ্যান বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে দাড়িয়ে আছে। ভ্যান চালক বস্তাগুলো রশি দিয়ে ঠিকঠাক মতো বেঁধে নিচ্ছে। এসময় আলমাস অফিসের রডের দরজার ভেতরে এবং মিলন একই দরজার বাইরে রহস্যজনকভাবে দাড়িয়ে আছে। ভ্যান চালক বইয়ের বস্তা বোঝাই ভ্যান নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে চলে গেলে আলমাস অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় মিলন বাইরে রহস্যজনকভাবে ঘুরাঘুরি করতে থাকে। এরপর আলমাস অফিস থেকে বেরিয়ে তালা লাগিয়ে একাডেমিক ভবনের সামনে রাখা বাইকের দিকে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, মিলন ও আলমাসের স্কুলে চুরির ঘটনা নতুন কিছু নয়। তারা দীর্ঘদিন ধরেই এরকম চুরি করে আসছে। আলমাস এক সপ্তাহ আগেও ২/৩ বস্তা বই চুরি করে বিক্রি করেছে। মিলন গত বছর স্কুলের বেঞ্চ চুরি করে ধরা পড়ে বহিষ্কার হয়েছিল। মিলন ও আলমাস তো স্কুলের পিয়ন নয় নিয়োগপ্রাপ্ত চোর। এছাড়াও স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের চলমান সামগ্রিক প্রশাসনিক কাঠামোর প্রতি নিন্দা প্রকাশ করেন।
অভিযুক্ত পিয়ন আলমাসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওগুলো কুড়িয়ে রাখা কাগজপত্র ছিলো। ওগুলো অফিসে ফেরৎ দিয়ে দিয়েছি,বিক্রি করিনি। প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে ফেরৎ দিয়েছি। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাউকে না জানিয়ে ওগুলো নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে একপর্যায়ে চুরির দায় স্বীকার করেছেন তিনি।
আরেক অভিযুক্ত পিয়ন মিলনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সহকারী প্রধান শিক্ষক আনারুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখনও কিছু বলতে পারছি না। যেহেতু তার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। এছাড়াও চুরির ঘটনায় মদদ দেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, একজন কর্মচারী বিপদে পড়লে হয়তো বলতে পারে। তাছাড়া এধরনের কাজ স্কুলে কোন শিক্ষক তো করে না।
প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে শনিবার সকালে বিদ্যালয়ের সভাপতি আমাকে ফোনে জানানোর পরে আমি স্কুলে আসলাম। সভাপতি সহ কয়েকজন আসলো।আলমাসকে ডাকলাম। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে স্কুলের পাশেই একজনকে ৭ বস্তা বই দেওয়ার কথা স্বীকার করে। ওইটা আমরা সেখান থেকে নিয়ে স্কুলে নিয়ে আসলাম। এবিষয়ে তারা আমাকে মোটেও জানায়নি, ঘুনাক্ষরেও জানায়নি। মিলনকে ইতোপূর্বে বেঞ্চ চুরির দায়ে ১৫ দিনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি আগামীকাল জরুরি সভা ডেকেছে। সেখানে কঠিন একটা শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আগামীকাল মিটিং এর পরে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হবে।
হালসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মুকুল সাইফুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সঠিক তথ্য যে ওরা ভ্যানে মালামাল নিয়ে গেছে। যেখানে বিক্রি করেছিল সেখান থেকে জানতে পেরেছি ওগুলো সব বই ছিলো। তাকে ২০ বস্তা দেওয়ার কথা ছিলো। সে টাকা সংকটের কারণে ৭ বস্তা নিয়ে নিয়েছে । প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে জানে কি-না তা জিজ্ঞেস করলে আলমাস না সূচক উত্তর দেয় এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক জানতেন বলে জানায়। মিলনকে এর আগেও বেঞ্চ চুরির দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছিল। একই কাজ সে আবারও করেছে। এব্যাপারে আমি কমিটির সবাইকে নিয়ে মিটিং এ বসবো। তারপর ওদের বিষয়ে যে বিচার হয় সেই বিচারের আওতায় নিয়ে আসবো।