কুষ্টিয়া অফিস:
কুষ্টিয়ায় আদালত থেকে মামলার হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে যুবককে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আনুমানিক একটার সময় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানাধীন রাজ্জাক মোড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আসিকুজ্জামান শুভ (৩৩) নামের এক যুবককে উজানগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান সমর্থকের সন্ত্রাসীরা কুপিয়েছে। তবে ইউপি চেয়ারম্যান ছানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন এঘটনার সাথে সে কোন ভাবেই সম্পৃক্ত নয়। তাকে ফাঁসিতে চক্রান্ত চলছে।
আহত শুভ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের দূর্বাচারা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিমের ছেলে।
উজানগ্রাম ইউনিয়নের দূর্বাচারা গ্রামে দীর্ঘ দিন ধরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাংগীর কবির লিপ্টন ও চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন মোল্লা সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই ঘটনা ঘটেছে। আহত শুভ জাহাংগীর কবির লিপ্টন সমর্থক ও হামলাকারীরা সানোয়ার মোল্লা সমর্থক বলে জানা গেছে।
আহতের পরিবার সুত্রে জানা যায়, শুভ সকাল ১০ টার সময় নিজ বাড়ি দূর্বাচারা থেকে কুষ্টিয়ায় আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিতে এসেছিলো। মামলার হাজিরা শেষ করে বেলা সাড়ে ১২ টার সময় শুভ মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলো। বাড়ি ফেরার পথিমধ্যে সদর উপজেলার রাজ্জাক মোড়ের কাছে পৌছালে আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা শুভর মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। তারপর শুভ কিছু বুঝে উঠার আগেই তার উপর ধারালো অস্ত্র ও লাঠি সোটা নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় শুভর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে হাত, পা ও কয়েকটি নখ ভেঙ্গে দিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মোটর সাইকেল ভাংচুর করে ফেলে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ছুটে এসে শুভকে আহত অবস্থায় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে শুভ আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
আহত শুভর পিতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম জানান, আমার ছেলে আদালতে হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রাজ্জাক মোড় থেকে চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন মোল্লা ও লাভলুর নেতৃত্বে দূর্বাচারা এলাকার মৃত তেজারত খার ছেলে সন্ত্রাসী লাট্টু (৫৫), একই এলাকার কুদ্দুসের ছেলে রাকিব (৩০), সামসুদ্দিনের ছেলে মনিরুল (৩৮), রেন্টুর ছেলে রাকিব (৩২), আব্দুল মন্ডলের ছেলে আজম (৪৫), মৃত তাঁরা শেখের ছেলে সাহেব আলী (৪০), রাহাত আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ (৩১), মালেকের ছেলে সাইদুল (৩৪), মৃত সিরা সর্দারের ছেলে আজো (৩৬), দীনে সর্দারের ছেলে ওসমান (৩২), ইতবারের ছেলে রতন (৪০), চাঁদ আলী মল্লিকের ছেলে জুয়েল (৩৫), কালের ছেলে মিলন মল্লিক (৪২), সামসুদ্দিন মল্লিকের ছেলে রশিদ (৪৭), মাহাতাব শেখের ছেলে মনিরুল (৪৮), বাজর আলীর ছেলে রেন্টু (৫০), জামাল সর্দারের ছেলে সুমন সর্দার (৩০), মৃত মফেজ সর্দারের ছেলে ময়না সরদার(৫২), মৃত মফেজ সর্দারের ছেলে নয়ন সরদার(৪৫), মৃত রাজ্জাকের ছেলে হাইদুল(৩৫), মৃত আনোয়ার সরদারের ছেলে ছকুল(৪৫) ও হাকিম মন্ডলের ছেলে মুক্তার মন্ডল (৩৬) এই হামলা চালিয়েছে।
হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম জানান, খুবই মারাত্মকভাবে জখম অবস্থায় রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে। রোগীর দুই হাত, দুই পা, পিঠ এবং মাথায় আঘাত করা হয়েছে। রোগীর শরীরের অনেক জায়গায় হাড় ভেঙ্গে গেছে। শরীর থেকে অনেক রক্তক্ষরন হয়েছে। এক্স-রে করলে আরও অনেক স্থানের ক্ষত বোঝা যাবে।
উজানগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন মোল্লার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যখন হামলার ঘটনা ঘটে তখন আমি ইউএনও স্যারের সাথে ছিলাম। আমাকে থানা থেকে ফোন দিয়েছিলো। আমি বলেছি আমি উজানগ্রাম ইউয়নের সকলের চেয়ারম্যান। যে হামলার সাথে জড়িত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি। যাকে মেরেছে তার বিরুদ্ধে ৮/১০ টা মামলা রয়েছে। এছাড়াও হামলাকারীর বিরুদ্ধেও কয়েকটি মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মামুন রহমান জানান, আমরা ঘটনাস্থানেই আছি। নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।