Pathikrit Most Popular Online NewsPaper

    নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

    কুষ্টিয়ার বনফুড ও ওভাল বেকারীর পাউরুটিতে ক্যানসার সৃষ্টির সহায়ক পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। 

    গত ৪ জুন মঙ্গলবার ভ্রাম্যমান নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগারে ওই প্রতিষ্ঠানের পাউরুটি পরীক্ষা করে এমন প্রমাণ পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন নিরাপদ খাদ্য অফিসার সজিব পাল। 

    ওই প্রতিষ্ঠানের পাউরুটিতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পটাশিয়াম ব্রোমেট অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করা হয়েছে। তাৎক্ষনিক বনফুড বেকারীতে মজুদ পাউরুটি ধ্বংস করেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং বাজার থেকে তাদের উৎপাদিত পাউরুটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়। 

    নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা যায়, গত ৪ জুন কুষ্টিয়ার বনফুড বেকারী, শিশির বেকারী, ওভাল, ফুড ভ্যালি, টেস্টিটিড ও অলটাইম বেকারীর পাউরুটি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন। এগুলোর মধ্যে বনফুড বেকারীর পাউরুটিতে অতিরিক্ত পরিমানে পটাসিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন। এছাড়া ওভাল বেকারীর পাউরুটিতেও বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম ব্রোমেট উপাদান যাওয়া যায়। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। 

    কুষ্টিয়া শহরের বনফুড বেকারীর পাউরুটিতে দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসার সৃষ্টির সহায়ক পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। এটি ব্যবহারের ফলে পাউরুটিকে আরো ফোলাতে এবং নরম করতে সাহায্য করে। এছাড়াও (improver chemical) ইমপ্রুভার কেমিক্যাল পাওয়া গেছে যা অতিরিক্ত ব্যবহারে বেশিদিন টিকিয়ে রাখা যায় পাউরুটিকে। দীর্ঘদিন ধরেই বনফুডের তৈরি খাবার ও পাউরুটির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করে আসছিল। অনেকেই এখানকার উৎপাদিত খাবার খেয়ে বমি ও বাথরুমসহ অসুস্থতা বোধ করে। এছাড়াও বেশ কয়েকবার বনফুড থেকে খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, মানব শরীরে পটাশিয়াম ব্রোমেট প্রবেশের ফলে থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ, (Class 2B carcinogen) ক্যান্সার, (Genotoxic Carcinogen) যা জীনগত রোগ ও মিউটেশন ঘটাতে পারে। এছাড়াও ডায়রিয়া, বমিভাব, পেটের পীড়াসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অথচ রুটি, পাউরুটি ও বেকারি পণ্যে পটাশিয়াম ব্রোমেট ও পটাশিয়াম আয়োডেট ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। জরুরি সতর্কীকরণ ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরবর্তীতে খাবারে এই ধরনের উপাদান পাওয়া গেলে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক শাকিল আহম্মেদ জালালকে। কিন্তু বনফুড বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফের সেই পাউরুটি দোকানে বিক্রয় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

    রুটি, পাউরুটি ও বেকারি খাদ্য প্রস্ততকারী বা ব্যবসায়ীগণকে রুটি, পাউরুটি ও বেকারি খাদ্যে সংযোজক দ্রব্য হিসেবে পটাশিয়াম ব্রোমেট (KBrO3) ও পটাশিয়াম আয়োডেট (KIO3) ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিটি প্রচারের পর এ সংক্রান্ত নির্দেশনাসমূহ অমান্যকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা উলেখ রয়েছে। এমন নির্দেশনা থাকার পরও কুষ্টিয়ায় বনফুড বেকারি তাদের পাউরুটিতে পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার বন্ধ না করে মানবদেহের ক্ষতিকর উপাদানটি পাউরুটির সাথে মিশিয়ে প্রতিনিয়ত বাজারে বিক্রি করে আসছিল। অভিযোগ উঠেছে, গত ৪ জুন বনফুডের পাউরুটিতে পটাশিয়াম ব্রোমেট প্রমাণ মেলায় ওই প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শিত সব পাউরুটি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল এবং বাজার থেকে সব পাউরুটি জরুরী ভিত্তিতে উঠিয়ে নিয়ে ধ্বংস করতে নির্দেশ দিয়েছিল নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

    একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ৪ জুন পাউরুটি পরীক্ষা করে বাজারে বিক্রয় নিষিদ্ধ করলেও তারা ৩ জুন উৎপাদিত পাউরুটিও বাজারে বিক্রয় করছে। সাধারণ ক্রেতারা বলছে, মারাত্বক ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া বনফুডের বিরুদ্ধে অবশ্যয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কোনভাবেই এদেরকে ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। অধিক মুনাফার লোভে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠার অতি দ্রুত বন্ধ করে দেয়া উচিত। 

    বনফুড বেকারীর মালিক শাকিল আহম্মেদ জালালের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পটাশিয়াম ব্রোমেট কি সেটাই আমি জানিনা। পাউরুটিতে তৈল, চিনি, ডিম, ময়দা ও ইস্ট ব্যাবহার করা হয়। ইস্টে পটাশিয়াম ব্রোমেট ছিল কিনা জানিনা। এখন আগে যে ইস্ট ব্যাবহার করতাম সেটাও বন্ধ করে দিয়েছি। এরআগে আপনার বেকারির খাবার খেয়ে বেশকয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে এমন প্রশ্ন করলে তিনি ফোন কেটে দেন।

    এবিষয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কুষ্টিয়া জেলার নিরাপদ খাদ্য অফিসার (অ.দা.) সজিব পাল বলেন, মোট ছয়টি প্রতিষ্ঠানের পাউরুটি পরীক্ষা করে বনফুড বেকারীর আমরা তাৎক্ষনিক তাদের দোকান থেকে সব পাউরুটি জব্দ করে ধ্বংস করেছি এবং বাজার থেকে তাদের উৎপাদিত সকল পাউরুটি উঠিয়ে নিয়ে ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছি। তাদের সতর্ক করেছি, পরবর্তীতে এমন যেন না হয়। পুনরায় খাদ্যে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করলে ডিরেক্ট মামলা দেয়া হবে। জেলা স্যানেটারী ইন্সপেক্টর আরাফাত আলী বলেন, বনফুড ও ওভাল বেকারীর পাউরুটিতে অতিরিক্ত মাত্রায় পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার করা হয়েছে। এটি বেশি দিন মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যানসার ও কিডনী রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া পটাশিয়াম ব্রোমেট মানবদেহের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। যা ব্যবহার করছে ওই দুইটি প্রতিষ্ঠান। 

    উলেখ্য, গত ৩ বছর আগে কুষ্টিয়া শহরের বনফুডের খাবার খেয়ে একবারে প্রায় ২৫ জন অসুস্থ হয়েছিল। এদের মধ্যে পেটের ব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে ৮ জন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিল। বাকিদের স্থানীয় ক্লিনিক ও হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। অসুস্থরা হলেন-কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুস সালাম, সালামের ভাই মিঠু, শহরের ছেউড়িয়া এলাকার মিজানুর রহমান, মিজানুর রহমানের ছেলে সামু, মেয়ে মাইমুনা, স্ত্রী সালমা খাতুন, খোকসা এলাকার রইচ ও তার পরিবারের ১০জন ছাড়াও আরো অনেকে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরা জানিয়েছিল, কুষ্টিয়া শহরের বাবর আলী গেট এলাকায় বনফুড নামক বেকারীর পিৎজা ও বার্গার খাওয়ার পরপরই পেটে ব্যাথা ও বমির সাথে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। শরীর অতিরিক্ত খারাপ হয়ে পরলে স্বজনরা তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। 

    সেসময় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার বলেছিল, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। অসুস্থ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে। তখন বনফুডের মালিক শাকিল আহম্মেদ জালালসহ প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

    Spread the love