Pathikrit Most Popular Online NewsPaper

    নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

    কখনো ছাত্রদল, কখনো জাসদ, কখনো আওয়ামীলীগ, কখনো বা বিএনপি! বোঝা বড় দায় তিনি কার! যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে তখন সে দলের নেতাদের সাথে হয়েছেন ক্যামেরা বন্দি। অংশগ্রহণ করেছেন রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে। নিজেকে রাঙিয়েছেন পরিবর্তনের রঙে। বহুরূপী মানুষটির নাম আহাম্মদ আলী।

    তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নে। আহাম্মদ আলী দেখতে মধ্যবয়সী মানুষ হলেও খুবই সুচতুর তিনি। স্বার্থের কাছে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নন। নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নিজেদের দু’পক্ষের মধ্যে শত্রুতা বাঁধিয়ে দিতেও তার বেশ সুনাম রয়েছে। সুবিধা নেওয়ার জন্য নানান পন্থা জানা তার। টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে দখলবাজি, মামলাবাজি, তেলবাজি সবখানেই রয়েছে তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। যার সত্যতা এলাকাবাসীর বক্তব্য ও বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের (ছবি ও ভিডিও) উপর ভিত্তি করে প্রমানিত হয়েছে। তবে ১ম পর্ব প্রকাশের পর আহাম্মদের সাথে আবারো যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

    স্থানীয় এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে জানা যায়, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন হালসা কলেজে ভর্তি হন আহাম্মদ আলী। সেসময় ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত নেতাদের দাপট দেখে ছাত্রদল করার ইচ্ছা জাগে তার। যোগ দেন ছাত্রদলের ব্যানারে। রাজনীতির সাথে তেলবাজিও শুরু হয় তার। ধীরে ধীরে তেলবাজির তেলেসমাতিতে কলেজ শাখার তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছের মানুষ বনে যান তিনি। তাদের দাপটে তিনিও দাপট দেখাতে শুরু করেন। সারাদিন ভাই ভাই বলতে বলতে মুখ দিয়ে ফেনা বের করে ফেলা আহাম্মদ হয়ে যান আহাম্মদ ভাই। ভাইদের সাথে জেলায় ও উপজেলার রাজনৈতিক নানা কর্মসূচিতে যাওয়ার সুযোগ মেলে তার। সুযোগ পাওয়ায় পরিচিতও বাড়ে আহাম্মদের। তেলবাজির তেলেসমাতিতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে তেমন কোন কষ্টই করতে হয়নি আহাম্মদ আলীর। সেসময় ভাইগিরি দেখিয়ে, নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করে সুকৌশলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন আহাম্মদ। এরপর শুরু হয় টেন্ডারবাজির তেলেসমাতি।‌ স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর কোনটাসা হয়ে পরে আহাম্মদ আলী গ্যাং। তীক্ষ্ম বুদ্ধির আহাম্মদ সহজে হাল ছাড়া মানুষ নয়। ঝোপ বুঝে আবারো কোপ মেরে দেন তিনি। তরী ভেড়ান জাসদের ঘাটে। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর পিছনে ঘোরাঘুরি শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার কাছে ভেড়ার চেষ্টা করেন তিনি। একপর্যায়ে সফলও হন। বনে যান জাসদ নেতা। মিরপুর-ভেড়ামারা আসনে ১৪ দলীয় জোটের হয়ে হাসানুল হক ইনু সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে সরাসরি নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নেন আহাম্মদ। ইনুকে খুশি করতে নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে যান। ইনুর হাত মাথায় নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে টেন্ডারবাজি শুরু করেন তিনি। বেশ ভালোই চলছিল তার ভেলকিবাজি। তবে তার চাটুকার স্বভাবের কারণে সেখান থেকেও ছিটকে পরেন তিনি। তাতে তার তেমন কোন সমস্যা হয়নি। খুব সহজেই প্রতিবেশী আরেক টেন্ডারবাজ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সুরঞ্জন ঘোষের সাথে হাত মেলান তিনি। সুরঞ্জন ঘোষের হাত ধরে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন আহাম্মদ। সুরঞ্জন ও কামারুলের সাথে হাত মিলিয়ে ৩ জন মিলে শুরু করেন দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, মামলাবাজি সহ নানা অপকর্ম। ইউনিয়ন ও উপজেলায় সরকারি যত ভাতা ও সুবিধা আসতো সেগুলোর ভাগ দিতে হতো আহাম্মদকে। কামারুল ও সুরঞ্জনের হাত ধরে প্রশাসনের সাথেও সখ্যতা গড়ে তোলেন আহাম্মদ। সুবিধা না দিলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলি ও শাস্তির ব্যবস্থা করার হুমকি দিতেন তিনি। মিরপুর উপজেলা ও আমবাড়িয়া ইউনিয়নের একাধিক ত্যাগী, পরীক্ষিত বিএনপি নেতাকর্মীদের রাতের আঁধারে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করতেন আহাম্মদ। এমনকি একাধিক নেতাকর্মীকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কাছে তুলে দিয়েছেন এই আহাম্মদ। আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে তার সরব উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সংসদ নির্বাচনে কামারুল আরেফিন মিরপুর-ভেড়ামারা আসনে প্রার্থী হলে আহাম্মদ তার পক্ষে দিনরাত নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নেন। কামারুলকে ভোট দিতে স্থানীয় এলাকাবাসীর একাংশকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন আহাম্মদ। এমনকি ভোট না দিলে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেন আহাম্মদ। তার সাথে কেউ কোন্দলে জড়ালে তাদের হয়রানি মুলক মামলায় ফাঁসিয়ে দিতেন তিনি। ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের এই নেতা আবারো গিরগিটির মতো রঙ বদল করেছেন। এখন নিজেকে বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের কাতারে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আহাম্মদ আসলে কোন দলের নেতা সেটা বুঝে উঠা একেবারেই অসম্ভব। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সে দলের ব্যানারে জায়গা আদায় করে নেন তিনি। আওয়ামী শাসনামলে বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক নেতাকর্মীকে প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করেছেন আহাম্মদ। রেলওয়ে থেকে শুরু করে সরকারি সকল দপ্তরে টেন্ডারবাজি করতেন তিনি। টেন্ডারবাজি, দখলবাজি ও মামলাবাজি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন আহাম্মদ। ৫ আগষ্টের পর থেকে তিনি আবার বিএনপিতে ভিড়ে গেছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে অগ্রণী ভূমিকা ছিল আহাম্মদ আলীর। আন্দোলন চলাকালীন তার সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছিলেন তিনি। এমনকি নিজেও মাঠে নামতেন আহাম্মদ। আন্দোলনের সময় মজমপুর থেকে চৌড়হাস এলাকায় ছাত্র জনতার উপর বেশ কয়েকবার হামলার ঘটনা ঘটে। ঐ হামলায় আহাম্মদ অংশ নিয়েছিলেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। হালসা কলেজে ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়ার পর নিজ এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন আহাম্মদ। বিভিন্ন সময় সরকার দল পরিবর্তন হলেও তার বাহিনীর কোন পরিবর্তন হয়নি। এলাকার মাদকাসক্ত ও দুষ্ট প্রকৃতির মানুষজন তার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। সবসময় সরকার দলের ছায়াতলে থাকায় এই বাহিনীর সদস্যরা অনাহাসে সকল অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। এখনও তারা সক্রিয়। ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা বনে যাওয়া আহাম্মদ আবারো দলীয় পদ বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন। পূর্বের ন্যায় আবারো নেতাদের সাথে ছবি তোলার রাজনীতি শুরু করেছেন তিনি। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীদের ভিড়ে গিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন তিনি। তবে তার সাথে কোন নেতাকর্মীকে দেখা যায় না। একাই মোটরসাইকেল নিয়ে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে গিয়ে হাজির হন। এরপর সুযোগ বুঝে ছবি তুলে চম্পট দেন। পরে সেই ছবি ফলাও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন আহাম্মদ। তাকে ছবি তোলা নেতা বললে ভুল হবে না। এদিকে একাধিক মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে জানা গেছে, ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন হালসায় আসাদুল নামের এক জনের বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ৩ দিন পর পার্শ্ববর্তী ইবি থানার এক পুকুরের মধ্যে তার লাশ পাওয়া যায়। ঐ আসাদুল হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে একাধিক নির্দোষ মানুষকে ঐ মামলার আসামি বানিয়েছেন আহাম্মদ। এমনকি স্থানীয় বিএনপি নেতাদেরও মামলার আসামি বানিয়েছেন তিনি। মামলার অধিকাংশ আসামিই ঐ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। শুধুমাত্র নিজ স্বার্থ সিদ্ধি ও বিএনপির পদ বাগিয়ে নিতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার ৫ দিন পর আহাম্মদ মনগড়া আসামি বানিয়ে মামলা রুজু করিয়েছেন। এবার ঐ মামলাকে কাজে লাগিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির পদ নিয়ে মরিয়া তিনি। সর্বদলীয় নেতা আমবাড়িয়া ইউনিয়নের গ্রাম হালসার বাসিন্দা আহাম্মদ আলীর সন্ত্রাসী গ্যাং ও নানান অপকর্মের ইতিহাস জানতে চোখ রাখুন পরবর্তী পর্বে।

    Spread the love