আশরাফুল আলমঃ
অভাবের সংসারে কিস্তি তুলে ইজিবাইক কিনে জীবিকার হাল ধরেছিলেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সাধুখালী গ্রামের আকতার হোসেন। প্রতিদিনের মতো গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) ইজিবাইক নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি। কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার ইবি থানাধীন মধুপুর এলাকা থেকে পুলিশ পরিচয়ে তার ইজিবাইকে ওঠে ছিনতাই চক্রের এক সদস্য। পরে তাকে ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয় একই থানার শান্তিডাঙ্গা এলাকায়, যেখানে যোগ দেয় চক্রের আরও এক সদস্য। মুহূর্তেই তারা ইজিবাইকটি ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।জীবিকার একমাত্র সম্বল হারিয়ে দিশেহারা আকতার হোসেনের পরিবার এখন চরম সংকটে, প্রায় পাগলপ্রায় অবস্থা তাদের।
এর আগে ১৭ জুলাই, একই থানার বিত্তিপাড়া এলাকা থেকে পুলিশ পরিচয়ে ইজিবাইক ভাড়া নিয়ে শান্তিডাঙ্গা এলাকায় এনে আমির ইসলাম নামে আরও এক চালকের ইজিবাইক ছিনতাই করে এই চক্র। ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, প্রথমে একজন যাত্রী সেজে ইজিবাইকে ওঠে, পরে আরও দুইজন যোগ দিয়ে সম্মিলিতভাবে ছিনতাই করে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু ইজিবাইক নয়— একই কায়দায় একাধিক ভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। ইবি থানা ও পার্শ্ববর্তী শৈলকুপা থানা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় এই চক্রটি যাত্রী সেজে যানবাহন ভাড়া নেয়, এরপর অজ্ঞান করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে অথবা কৌশলে ছিনিয়ে নেয় ইজিবাইক বা ভ্যান। গত কয়েক বছরে এমন অর্ধশতাধিক ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে শৈলকুপা, গাড়াগঞ্জ ও শেখপাড়া এলাকা থেকে ভাড়া নিয়ে ইবি থানা এলাকায় এনে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি।
এ চক্রের বিরুদ্ধে শুধু যানবাহন ছিনতাই নয়, পুলিশ পরিচয়ে বাসাবাড়ি ও মহাসড়কে ডাকাতির অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি মধুপুর এলাকায় এক বাড়িতে এবং মহাসড়কে মোটরসাইকেল আরোহীর কাছ থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।তবে একের পর এক ঘটনার পরও এখন পর্যন্ত চক্রটিকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ পুলিশ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, থানায় অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা মেলে না, ফলে পুলিশের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন অনেকে। তাই অনেকেই এখন আর অভিযোগ দাখিল করতেও আগ্রহী নন।সচেতন মহলের মতে, একই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও পুলিশের উদাসীনতা অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে। দ্রুত চক্রটিকে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় না আনলে এ ধরণের অপরাধ ক্রমেই বাড়বে।
এ বিষয়ে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ওসি (তদন্ত) মামুনুর রশীদ বলেন, “পূর্বের ঘটনা আমার জানা নেই। আমি নতুন এসেছি। অপরাধীরা বিভিন্ন পরিচয়ে অপরাধ করে থাকে। আমরা তাদের শনাক্তের চেষ্টা করছি এবং আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”