
মারফত আফ্রিদী, মিরপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার মিরপুর বাজারের ঈগল চত্বর এলাকায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, “এইচ সি শপিং কমপ্লেক্স” নামের ওই ভবনটির প্রথম ফ্লোরের কাজ প্রায় শেষের পথে। অথচ মিরপুর পৌরসভার কোনো অনুমোদন ছাড়াই সেবা ঔষধালয়ের মালিক ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ী জিয়ানুল হক খান বাবলু চৌধুরী ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ভবনটির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, অবৈধ এই নির্মাণ কাজের কারণে সওজের অর্থায়নে জিকে খালের ওপর নির্মিতব্য প্রায় ২২ কোটি টাকার ব্রিজের এপ্রোচ রোড ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বাজারের ব্যবসায়ীদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে অতি সম্প্রতি মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক নাজমুল ইসলাম সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় বাবলু চৌধুরী দাবি করেন, “এটি আমার দলিলভুক্ত সম্পত্তি।” জবাবে ইউএনও বলেন, “সওজের রাস্তা কেটে ভবন নির্মাণ করা যাবে না।” তবে এরপর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট সওজ নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুরুল করিম বাবলু চৌধুরীর আত্মীয় হওয়ায় তিনি এই অবৈধ দখল কার্যক্রমে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, বাবলু চৌধুরী ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের জমি দখল করে মার্কেট ও বসতবাড়ি নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকা ভাড়া তুলছেন। বাজারের বিউটি সুপার মার্কেটসহ প্রায় ৬০-৭০টি দোকান থেকে তিনি লাখ লাখ টাকা সিকিউরিটি এবং মাসিক ভাড়া আদায় করছেন, অথচ কোনো সরকারি ট্যাক্স প্রদান করছেন না।
একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বাবলু চৌধুরী ও তার পরিবার প্রায় ৪০ বছর ধরে সরকারি জমি দখল করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে। ব্যাংক হিসাব তল্লাশি করলেই তার প্রমাণ মিলবে।”
এ বিষয়ে সওজ খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসাইন জানান, “ব্রিজের ডিজাইন বা জনসাধারণের চলাচল ব্যাহত হয়—এমন কিছু হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ইউএনও নাজমুল ইসলাম বলেন, “অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। তারা দাবি করছে জমিটি তাদের নিজস্ব সম্পত্তি। পৌরসভার মাধ্যমে যাচাই করা হবে। সরকারি জমি দখল প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে বাবলু চৌধুরী সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া দলিলের জমিতে ভবন নির্মাণ করছি।” কিন্তু ট্যাক্স ফাঁকি ও সরকারি জমি দখলের প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এলাকার সচেতন মহলের দাবি, অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ধ্বংসের মুখে পড়বে এবং বাজার এলাকায় জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।