কুষ্টিয়া অফিসঃ
১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা পাকিস্তানি শত্রুমুক্ত হয়েছিল। কুষ্টিয়া জেলায় পাক হানাদারের সাথে ছোট বড় ২২ টি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। যুদ্ধের নয় মাস জুড়েই কুষ্টিয়া জেলায় পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি যোদ্ধাদের তুমুল লড়াই শেষে ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলা মুক্ত করে বীর সেনারা।
কুষ্টিয়া জেলার সূর্য সন্তানেরা জেলাকে দুইবার শত্রু মুক্ত করেন। বংশীতলা, দূর্বাচারা, মঠবাড়িয়া, দহকুলা, চৌড়হাস, মজমপুর,মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ, কুমারখালী উপজেলা পান্টি সহ বিভিন্ন স্থানে তুমুল লড়ায়ে অসংখ্য পাকিস্তানি হানাদারদের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে প্রথমবার ১ এপ্রিল একবার শত্রু মুক্ত করে।
১৭ এপ্রিল বিকেলে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার(পরবর্তিতে মুজিবনগর) আম্রকাননে ১০ এপ্রিল তারিখে গঠিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহন ও পরিচিতি অনুষ্ঠান অনুষ্টিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা ৮ নং সেক্টরের অধীন ছিল। মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ৮ নং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চৌড়হাস, বংশীতলা, জিয়ারখী, কাঞ্চনপুর, কমলাপুর, মনোহরদিয়া, ঝাউদিয়া, বাড়াদি, জগতি, কয়া, পান্টি, আলামপুর, হরিপুর, সুলতানপুর, হরিনারায়ণপুর, চৌরঙ্গী, কুষ্টিয়া শহর বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় খন্ড খন্ড যুদ্ধ পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের। ২৮ নভেম্বর মিরপুর থানার কাকিলাদহ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ও পাক সৈন্য, তাদের বাহিনীর মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এখানে ৫০০ জন মুক্তিযোদ্ধা এখানে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। এখানে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২৮ নভেম্বর জীবন নগর , ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, ৮ ডিসেম্বর দৌলতপুর, খোকসা, কুমারখালী, এবং ১০ ডিসেম্বর সকালে কুষ্টিয়া শহরের দক্ষিণে চৌড়হাস বি টি সি তামাক ক্রয়কেন্দ্রের কাছে জিকে ক্যানেলের ব্রীজের উত্তর পাশে মেইন রাস্তার পাক সৈন্যের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী- মিত্র বাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তানবাহিনীর সাথে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এখানেও মিত্র বাহিনীর ৭০ জন শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার সমস্ত এলাকা স্বাধীন ও শত্রু মুক্ত হয়। ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহর, পোড়াদহ, মিরপুর, ভেড়ামারা এলাকা স্বাধীন শত্রু মুক্ত হয়। সেদিনের ধবংসলীলা কুষ্টিয়া শহরে আজও স্মৃতি বহন করে। এপ্রিল মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ২২ টি ছোটবড় যুদ্ধ শেষে কুষ্টিয়া ১১ ডিসেম্ব হানাদার মুক্ত হয়েছিল। হানাদার কুষ্টিয়াতে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের জোনাল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে অফিসিয়ালী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে জোনাল কাউন্সিলের সেক্রেটারী এম শামসুল হক কে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার দেন। মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার কবি, ছাত্র, সাহিত্যিক, শিল্পি, লেখকের ভুমিকা ছিল উল্লেখ্যযোগ্য। সেদিনের কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের ইতিহাস আজও মানুষের মনে দাগ কাটে। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় আসার কয়েকদিন আগে ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলা শত্রুমুক্ত হয়। এ বিজয়ে শহরের আশপাশের এলাকা থেকে হাজারো মুক্তিপাগল মানুষ জড়ো হয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিতে থাকে। হাজার হাজার মানুষের জয় বাংলা সোলো গান আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হতে থাকে। বৃদ্ধ শিশু সকলেই জয় বাংলা স্লোগানে মেতে ওঠে।
কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস উপলক্ষে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মসহ বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি পালন করেছে।