Pathikrit Most Popular Online NewsPaper

    অবৈধ ইটভাটা চালুর দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘিরে বিক্ষোভ করার ছবি

    নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

    যৌক্তিক দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে মানবন্ধন, জনসমাবেশ, কুচপুত্তলিকা দাহ ও বিক্ষোভ মিছিলের মতো কর্মসূচির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় আইন পরিপন্থী অযৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে এসব কর্মসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে। কিছু অসাধু মহল তাদের নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। আর এসব কর্মসূচি পালন করার কারণে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে জনদুর্ভোগ। দাবি আদায়ের নামে দীর্ঘ সময় ধরে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখার কারণে চরম জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া কোথাও কোথাও বিক্ষোভকারীরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাড়িতে হামলা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইনের পরিপন্থী যেসব দাবি নিয়ে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম অবৈধ ইটভাটা চালু রাখার দাবিতে মালিক-শ্রমিকদের বিক্ষোভ, প্রকাশ্যে ধূমপানের দাবি, অবৈধ ট্রলি অবাধে চলার দাবি এবং ঘুষ দিয়ে কাজ না পেয়ে ঠিকাদার-কর্মচারীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি।

    সূত্রে জানা যায়, মাহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশন নম্বর ১৩৭০৫/২০২২ এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধের আদেশ দেন। এছাড়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ওই সকল অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। মাহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কুষ্টিয়াসহ স্ব স্ব জেলার জেলা প্রশাসকগণ সকল অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা শুরু করেন এবং একপর্যায়ে কার্যক্রম বন্ধ করার নোটিশ ঝুলিয়ে দেন। পরবর্তীতে গত ৪ মার্চ অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটার মালিকরা শ্রমিকদের ট্রামকার্ড হিসাবে ব্যবহার করে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবৈধ ইটভাটা চালু রাখাসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা না করা এবং ভাঙচুর বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্বারকলিপি প্রদান করেন। এরপরও কোন ফলাফল না পেয়ে ১১ মার্চ আবারো একই দাবিতে বাস ভাড়া করে শ্রমিকদের নিয়ে স্ব স্ব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্বারকলিপি প্রদান করেন তারা। এসময় অবৈধ ইটভাটা চালু রাখা ছাড়াও পরিবেশ আইন উপেক্ষা করে বিনা শর্তে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র দাবি করেন তারা। সেই সাথে এসব অবৈধ ইটভাটাকে কোনরকম জরিমানা না করা সহ বেশ কয়েকটি অযৌক্তিক দাবিও জানান তারা। এদিকে গত ৩ মার্চ রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকায় একটি চায়ের দোকানে দুই তরুণীর প্রকাশ্যে ধূমপান কান্ডে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এক বক্তব্যকে ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার তুমুল ঝড় উঠে। প্রকাশ্যে ধূমপান রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও এই বিষয়টি নিয়ে একটি মহল রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মহলটি ঘটনাস্থল লালমাটিয়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কুচপুত্তলিকা দাহ করেন এবং তাঁর অপসারণ দাবি করেন। অন্যদিকে গত ৬ মার্চ কুষ্টিয়ায় ৪০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে ১০ লক্ষ টাকা অগ্রিম ঘুষ দিয়েও কাজ না পেয়ে সদ্য সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ আকুল উদ্দিনের বাসভবনে হামলা চালায় এক ঠিকাদার। ঐ সময় সন্ধ্যা রানী রাজবংশী নামের ঠিকাদারের সাথে তার বেশ কয়েকজন সহযোগী হামলায় অংশ নেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেসময় অভিযুক্ত নারী ঠিকাদার ওই সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলেও গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছিলেন। এ ঘটনার পরদিন কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সামনে ঠিকাদার সন্ধ্যা রানী তার কর্মচারীদের সাথে নিয়ে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। রাস্তার ত্রাস খ্যাত আরেক অবৈধ যান ইঞ্জিন চালিত ট্রলি। এই অবৈধ যান অবাধে চলার দাবিতে গত ৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার মজমপুর গেটে দীর্ঘ সময় সড়ক অবরোধ করে রাখেন ট্রলি চালকরা। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এই অবৈধ ট্রলির চাপায় গত দুই মাসে কুষ্টিয়ায় ৪ শিক্ষার্থী নিহত হয়। সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে বারংবার অবৈধ যানটি বন্ধে দাবি জানানো হলেও তেমন কোন সুফল পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। আইন পরিপন্থী ও অযৌক্তিক এসব দাবিতে অবরোধ কর্মসূচির কারণে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিব্রত হয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে নেটিজেনরা।

    রফিকুল ইসলাম নামের এক দুরপাল্লার যাত্রী প্রতিবেদককে জানান,”কোথায় কখন কি দাবিতে রাস্তা অবরোধ হচ্ছে ঠিক নাই। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর কোন সুযোগ নেই। এছাড়াও রয়েছে ডাকাত আতঙ্ক। এসব কর্মকাণ্ডে চরমভাবে বিব্রত হচ্ছি।

    “শারমিন নামে আরেক নারী যাত্রী প্রতিবেদককে জানান,” কোলের শিশু বাচ্চাকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় অবরুদ্ধ থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। গরমে বাচ্চারও কষ্ট হয়। তাছাড়া উচ্চ শব্দের কারণে বাচ্চা চমকে চমকে উঠে। কখন রাস্তা ছাড়ে, কখন বাড়ি পৌঁছায় এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।

    “কামাল নামে এক ব্যবসায়ী প্রতিবেদককে জানান, ” যেখানে সেখানে সড়ক অবরোধ থাকার কারণে সময়মত পণ্যবাহী গাড়ী এসে পৌঁছাতে পারে না। এতে চরমভাবে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। পচনশীল দ্রব্যগুলো পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্রেতাদের ঠিকমতো পণ্য দিতে পারি না। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই।

    “প্রসঙ্গে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, আসলে যে কেউ যেকোনো দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে পারে। তবে যেটা অবৈধ, সেটা অবৈধই। অবৈধ যেকোনো বিষয়ে আমরা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। এ ধরনের আন্দোলন প্রশাসনের উপর চাপ বাড়াচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটু চাপতো বাড়েই।

    Spread the love