কুষ্টিয়া অফিস:
১৬ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এসময়কালে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক হয়রানি মূলক মামলা দিয়ে মামলাবাজ খ্যাতি পেয়েছেন ঠাকুর জর্দার কর্ণধার রমেশ ঠাকুর। তার দেওয়া হয়রানি মূলক মামলা থেকে প্রতিবেশী, আত্মীয়, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ কেউই রক্ষা পাননি।
কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়া ঠাকুর বাড়ি লেন আবাসিক এলাকায় আনুমানিক ১৭/১৮ বছর পূর্বে গড়ে ওঠে জর্দা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ঠাকুর জর্দা। জনস্বার্থের জন্য অধিক ক্ষতিকর জর্দা ফ্যাক্টরি আবাসিক এলাকায় গড়ে তুলতে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞার আইন থাকলেও এই ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে তার কোন প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়নি। উল্টো গড়ে ওঠার সময় থেকে এখন পর্যন্ত সদ্য পদত্যাগ করা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা ও দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে বহাল তবিয়তে চালানো হচ্ছে ফ্যাক্টরিটি।
“রমেশ নাথ চ্যাটার্জী (ঠাকুর)” মামলার বিবাদী ভুক্তভোগীদের কাছে এক মুর্তিমান আতঙ্কের নাম। ২০২১ সালের জুন মাসে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা ঠাকুর জর্দা ফ্যাক্টরিতে সংবাদ সংগ্রহে যায় সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল। ফ্যাক্টরির ভেতরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্য থাকলেও মামলাবাজ ঠাকুরের বাঁধার মুখে কয়েকঘণ্টা বাইরের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সাংবাদিক দলকে। একপর্যায়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ফোন করে “হামলা করা হচ্ছে’ বলে স্থানীয় মিলপাড়া ফাঁড়ির একটি পুলিশ টিমকে ঘটনাস্থলে ডেকে আনা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সে ঘটনার কোন সত্যতা না পেয়ে প্রতিবেদক দলের সাথে কথা বলেন এবং তাদের উপস্থিতিতে দলটিকে ফ্যাক্টরির ভেতরে প্রবেশ করিয়ে ফুটেজ নিতে সহযোগিতা করেন। সেসময় ফ্যাক্টরির মধ্যে অবস্থানরত শ্রমিকদের বক্তব্য গ্রহণ কালে মামলাবাজ ঠাকুরের আরো একটি গোপন মিলের সন্ধ্যান মেলে। ঐ মিলটিও আবাসিক এরিয়ার মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে নারকেলের খোসা, কাঠের গুঁড়া সহ মানুষের খাবারের উপযোগী নয় এমন খাদ্যদ্রব্য ব্যবহার করে তৈরি করা হয় আন্তর্জাতিক মানের উন্নত জর্দা। তবে দুঃখের বিষয় গোপন ফ্যাক্টরির সন্ধ্যান মিললেও ঐ দিন সে মিলে প্রবেশ করতে পারেনি প্রতিবেদক দল। গোপন মিল, উন্নতমানের জর্দা, প্রতিষ্ঠানের আইনি বৈধতা, সম্পদের পাহাড় সহ সকল বিষয়াদি বিস্তারিত আকারে পরবর্তীতে পর্বগুলোতে তুলে ধরা হবে।
সংবাদ সংগ্রহ করে প্রতিবেদক দল ফিরে আসার কয়েকদিন পর দলের মধ্য থেকে দুই সাংবাদিক ও প্রতিবেশী এক চল্লিশোর্ধ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করে মামলাবাজ রমেশ ঠাকুর। যেখানে বিবাদী ৩ জনের বিরুদ্ধে দিনেদুপুরে প্রায় লক্ষ টাকার জর্দা মাথায় করে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আনা হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে সংবাদ সংগ্রহ করা হলেও অদৃশ্য ক্ষমতায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা রুজু করা হয়। মামলা রুজু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর অদৃশ্য ক্ষমতার খোঁজে নামে প্রতিবেদক দল। অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য উঠে আসে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অবৈধ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জর্দার ব্যবসা চালিয়ে যেতে রাতের আঁধারে মামলাবাজ ঠাকুরও সাংবাদিক বনে গেছেন। তিনি স্থানীয় একটি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে পরিচয় বহন করে থাকেন। সেখানে প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা অনুদান হিসেবে দিয়ে থাকেন মামলাবাজ ঠাকুর। শুধু তাই নয়, প্রেসক্লাব নির্বাচনে হেরে গিয়ে রাতের আঁধারে গড়ে ওঠা কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসির সদস্য পদও বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। মামলাবাজ ঠাকুর সেখানেও প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা অনুদান দিয়ে থাকেন। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে কেঁচো খুঁজতে গিয়ে কেউটে সাপের সন্ধ্যান মেলার মতো ঘটনা ঘটেছে। মামলাবাজ রমেশ কট্টর আওয়ামী পন্থী। কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে তার চরম দহরম মহরম। দলীয় প্রোগ্রামগুলোতেও তার আর্থিক ও ব্যাক্তি উপস্থিতি চোখে পরার মতো। তবে দহরম মহরমে মামলা রুজু করার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারেনি। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, খেপিসির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ সাব্বিরুল আলমকে ৫ লক্ষাধিক টাকা দিয়ে মামলা রুজু করে সম্পূর্ণ প্রভাব বিস্তার করা হয়।
মামলাবাজ ঠাকুর এখানে থেমে যাননি। একের পর এক করে (এই মামলা সহ) সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতা বন্ধে কালো আইন খ্যাত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা দায়ের করতে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা প্রদান করেন তিনি। যার একটিতে, বহুল আলোচিত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ নির্মাণ কাজে অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করায় ঐ দুই সাংবাদিককে রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশের একটি দল। তাদেরকে গুম করে রাখার পরদিন সাংবাদিকদের চাপে থানায় দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। এরপর ঐ দুই সাংবাদিককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ২১ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হয় তারা। আরেকটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় চার সাংবাদিককে আসামি করা হয়। সেই মামলাটিতে একে একে হাজির হয়ে আদালত থেকে জামিন নেন চার সাংবাদিক। মামলা ৩টির মধ্যে কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালত থেকে ১টি, খুলনার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা খারিজ হয়ে যায়। বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১টি মামলা চলমান রয়েছে। রমেশ ঠাকুরের দায়ের করা হয়রানি মূলক মামলাগুলোর বিস্তারিত ধাপে ধাপে পর্ব আকারে তুলে ধরা হবে। (দেখতে চোখ রাখুন পরবর্তী পর্বগুলোতে)
সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে রমেশ ঠাকুর ( রমেশ নাথ চ্যাটার্জি) এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ফাইল ছবি: রমেশ নাথ চ্যাটাজি