কুষ্টিয়া অফিস:
গত ৫ই আগষ্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার প্রধান পদত্যাগের মাধ্যমে আওয়ামী শাসনামলের অবসান ঘটে। এরপর থেকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের ব্যানারে সুবিধা নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা ইতিমধ্যে গাঁ ঢাকা দেওয়ার পাশাপাশি দল পরিবর্তন করতে উঠে পড়ে লেগেছে। কুষ্টিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়।
কুষ্টিয়াতে একসময় হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসে সুবিধা নেওয়া নেতারা সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দলের দুর্দিনে দলবদলের পাশাপাশি নিজেদের দলীয় পরিচয় মুছতে চেষ্টারত রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিবেদকের সাথে কথোপকথন কালে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেখা” আমি কোন দলই করিনা” বলে জানিয়েছেন তিনি। যেখানে জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে একজন নেতা ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে কথার সুর বদলে ফেলতে পারেন সেখানে সুবিধাবাদী অন্যান্যদের কথা বলায় বাহুল্য।
অজয় সুরেকা কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও কুষ্টিয়ার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি যখন জেলা আওয়ামীলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি করা হয় তখন তিনি কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এরপর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া কুষ্টিয়া সদর আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্যের সাথেও তার খুবই ঘনিষ্ঠতা ছিল। অজয় সুরেখার মুখে সকল সময় হানিফের জয়জয়কার শোনা যেত। তিনি ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক জীবনে হানিফের নাম কাজে লাগিয়ে বেশ লাভবান হয়েছেন বলেও একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে। অজয় সুরেখা শুধু নিজেই লাভবান হননি তিনি হানিফ সাহেবকেও লাভবান করেছেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ দুভাগে বিভক্ত ছিল। একটি ভাগের নেতৃত্বে ছিলেন কুষ্টিয়ার প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র আনোয়ার আলী। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য। যাকে দীর্ঘদিন যাবৎ দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়না। আনোয়ার আলীর সাথে সংসদ সদস্য হানিফের সম্পর্কের যথেষ্ট ঘাড়তি ছিল। তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ার আলীর ছেলে হানিফের বিপক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনের দিন আনোয়ার আলীর ছেলে হানিফের বিরুদ্ধে পেশী শক্তির ব্যবহার করা ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোটারের অনুপস্থিতিতে ভোট পোল করা সহ নানান অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের আরেক ভাগের নেতৃত্বে ছিলেন মাহবুব উল আলম হানিফ নিজেই। এ গ্রুপটি সকল ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করতেন।
সূত্রটি আরো জানিয়েছে, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দুই বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা দায়িত্বে থাকলেও তাদেরকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হতো না। কুষ্টিয়ায় হানিফের রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক সহ সকল কাজ দেখাশোনা করতেন তার ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা। পরবর্তীতে সেখানেও দুটি ভাগে বিভক্ত হওয়ার কথা শোনা যায়। আতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন নেতা বিভক্ত হয়ে অজয় সুরেকার গ্রুপে যোগ দেয়। গ্রুপ প্রধান হিসেবে গ্রুপটির নেতৃত্ব দিতেন অজয় সুরেকা নিজেই। তাছাড়া কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী মহলের নেতা হিসেবে হানিফ সাহেবের প্রতিনিধি হয়ে সকল কাজে অংশগ্রহণ করতেন অজয় সুরেকা। তিনি এমপি প্রতিনিধি হয়ে ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দিতেন। গুজব আছে, রাজনৈতিক ইমেজ খাটিয়ে তিনি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকার ঋণ গ্রহণ করেছেন এবং ইতিপূর্বে একটি প্রতিষ্ঠান করে ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে সেই প্রতিষ্ঠান দেওলিয়া ঘোষণা করেছেন।
এদিকে আওয়ামী পন্থী এই নেতার অনিয়ম দুর্নীতি অনুসন্ধান করে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন কুষ্টিয়াবাসীর একাংশ। সঠিক অনুসন্ধান করলে অনেক তথ্য উঠে আসবে বলেও দাবি করেছেন তারা।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেখার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোন দলই করি না। যারা অ্যাক্টিভ দল করে তাদের কাছে দল সম্পর্কে শুনুন।