নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়ায় কিশোর গ্যাং। কয়েকটি ঘটনার পর আবারো সেই কিশোর গ্যাং এর নেতৃত্বে যুবককে অপহরণ পূর্বক ১০ টুকরো করে হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, কুষ্টিয়ায় নিখোঁজের ৩ দিন পর মিলন হোসেন (২৭) নামের এক যুবকের ১০ টুকরো করা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন আলাদা আলাদাভাবে পদ্মা নদীর দুর্গম চরের বালিতে পুঁতে রাখা লাশ উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশ। নিহত মিলন হোসেন কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার বাহিরমাদী এলাকার মওলা বক্স সরদারের ছেলে। সে তার স্ত্রীকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ই ব্লক এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারী) দিবাগত আনুমানিক রাত একটা থেকে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর এলাকার পদ্মা নদীর চরে অভিযান পরিচালনা করে এই লাশ উদ্ধার করেছে কুষ্টিয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এঘটনায় কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি কিশোর গ্যাং নেতা সজীব সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। সজিব কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়া হরিবাসর এলাকার মৃত মিলনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মাদক, অস্ত্রসহ ডজন খানেক মামলা রয়েছে। কুষ্টিয়া শহরের কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান হিসেবেও পরিচিত এই সজিব।
পুলিশ ও পরিবার সুত্রে জানা যায়, গত ৩১ জানুয়ারী বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টার সময় কুষ্টিয়া সদর থানাধীন হাউজিং এস্ট্রেট ই ব্লক এলাকা থেকে মিলন নিখোঁজ হয়। পরে তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর নিয়েও না পেয়ে কুষ্টিয়া সদর থানায়
একটি সাধারণ ডায়েরী করে মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুন। যার, জিডি নাম্বার : ২৩২৮, তারিখ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ইং। জিডি সুত্র ধরেই তদন্তে নামে কুষ্টিয়া জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি টিম। তারপর সন্দেহজনক ভাবে সজলকে গিজ্ঞাসাবাদের পর সজিবকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সজিব হত্যার বিষয়ে সমস্ত ঘটনা স্বীকার করে। সজিবের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সদর উপজেলাধীন হরিপুরের পদ্মার চরে রাতভর অভিযান করে নিখোঁজ মিলনের ১০ টুকরা বালিতে পুতে রাখা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মিলনের স্ত্রী জানান, সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে আমার স্বামীকে সজল ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আমার স্বামীর ফোন খোলা থাকলেও সজলের ফোন বন্ধ ছিলো। আমার স্বামীর ফোনে একাধিকবার কল দিলেও না পেয়ে সজলের ফোনে ফোন দি। তখন সজলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তারপরে আমরা থানায় গিয়ে জিডি করি। এরপরে সজলের ভাই আমাদেরকে হুমকি প্রদান করে৷ আমরা সজলকে বলি তোমাদের কি লাগবে বলো, আমরা দিচ্ছি। আমার স্বামীকে ফেরত দাও। তবুও পাশানদের মন গলেনি।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথ সাংবাদিকদের জানান, কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকায় মিলন নামের ওই যুবক অনলাইনে ব্যবসা করে অনেক টাকা উপার্জন করেছে এমন সংবাদ সজিব এবং তার দলবলের কাছে চলে যায়। সজিব এবং তার দলবল তার কাছে চাঁদা দাবি করে।মিলন চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে পরে মিলন নামের ওই যুবককে সজল ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সজলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সজল সজিবের নাম বলে। সজিবকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, মিলনকে তারা চাঁদার টাকার জন্য একটি জায়গায় আটকে রেখে মারধর করে। মারধরের এক পর্যায়ে মিলন মারা যায়। পরে তার লাশকে টুকরো টুকরো করে ৪ টি ব্যাগে ৭ টি গর্তে পদ্মার চরে পুতে রাখে। তারা যেই অস্ত্র ব্যবহার করে লাশটি টুকরো টুকরো করেছে সেই অস্ত্রগুলো কুষ্টিয়া কুমারখালী থানাধীন বাঁধবাজার এলাকায় ফেলে রেখে এসেছে। আমরা সেই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করেছি। তারপর সজিব সহ গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে রাত ১ টার দিকে আমরা উদ্ধার অভিযান শুরু করি। রাতভর অভিযান করার পরেও লাশ খুজতে পারিনি। পরে ভোরের আলো ফুটার পর আসামীরা লাশ পুতে রাখার জায়গা দেখিয়ে দিতে পারে। পরে আমরা টুকরো টুকরো লাশটি উদ্ধার করি। যেই ব্যাগে করে লাশ নিয়ে এসেছে সেই ব্যাগও আমরা উদ্ধার করি এবং এই ঘটনায় আমরা মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করেছি। আরও তিন চারজন জড়িত আছে আমাদের কাছে তথ্য আছে আমরা অভিযান চলাচ্ছি। অতিদ্রুত যাতে তাদেরকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করতে পারি তাই তৎপরতা চালাচ্ছি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, টুকরো টুকরো করা মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।