নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিম আলতাফ জর্জ (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রউফের (ট্রাক) সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। পৃথকভাবে থানায় মামলা করে দুই পক্ষ। এক পক্ষের মামলায় যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১০-১২ জনকে। অন্য মামলায় ২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ দুই মামলায় গতকাল শুক্রবার রাতে আটক আটজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ শনিবার বিকেলে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। তাঁরা হলেন জিয়াদুল ইসলাম, আবু হাসান, আশিকুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, মো. রাব্বি, আজমল হোসেন, রাব্বি হোসেন ও শান্ত হোসেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন দুই প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা। নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের দাবি, স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন তাঁদের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করেছেন এবং নৌকার মিছিলে অতর্কিত হামলা করে চারজনকে আহত করেছেন। তবে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকেরা দাবি করছেন, নৌকার লোকজনই প্রথমে তাঁদের দুটি ক্যাম্পে হামলা করে। জয় বাংলা বাজারের ক্যাম্প ভাঙচুরের সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে তাঁদের তিনজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নৌকা ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে গেছেন। এতে প্রতিদিনই সংঘর্ষ হচ্ছে, রক্ত ঝরছে। নির্বাচন সামনে রেখে আরও বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
নৌকার পক্ষের মামলার বাদী মো. তুষার ইমরান জানান, ইউপি চেয়ারম্যান মিজানের নেতৃত্বে ট্রাক প্রতীকের লোকজন তাঁর মিছিলে হামলা করেন। এতে তাঁর বাবা, ভাইসহ চারজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি সুষ্ঠু বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে যদুবয়রা ইউপির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, নৌকার সমর্থকেরা প্রথমে তাঁদের বহলবাড়িয়া ক্যাম্প ভাঙচুর করেন। পরে ছাতিয়ান ক্যাম্প ভাঙচুর করেন। এরপর জয় বাংলা বাজারের ক্যাম্প ভাঙতে এসে তাঁদের ওপর হামলা করেন। এতে তিনজন আহত হয়েছেন। তাঁর ভাষ্য, তিনি সংঘর্ষে জড়িত নন। তাঁকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রউফ বলেন, নৌকার কর্মীরা নিয়মিত তাঁর সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। কার্যালয় ভাঙচুর করছেন। গতকাল রাতেও তাঁর কয়েকটি ক্যাম্প ভাঙচুর করে কর্মীদের ওপর হামলা করেছেন। হামলায় তিনজন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা থানায় মামলা করেছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, তাঁর কয়েকজন কর্মীর ওপর হামলা করা হয়েছে। তাঁরা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর দাবি, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা এ কাজ করেছেন। পুলিশ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
নৌকার পক্ষের মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আজাদ খান বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা ও আহত হওয়ার ঘটনায় ২৪ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন বাদী। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্রাক প্রতীকের পক্ষের মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিনাজুল ইসলাম বলেন, ২৮ জনের নামে মামলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই কোনো তথ্য দেওয়া যাচ্ছে না।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল হক বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অপরাধী যেই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।