Pathikrit Most Popular Online NewsPaper

    জনদুর্ভোগ চরমে

    কুষ্টিয়া অফিস।।

    কুষ্টিয়ার প্রাণকেন্দ্র মজমপুর গেট, চৌড়হাস মোড় ও নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কের বড় একটা অংশ জুড়ে দখল করে রেখেছে ব্যাটারী চালিত যান ইজিবাইক। যার কারণে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। ঘটছে ছোট-বড় নানান ধরনের দুর্ঘটনা। জনদুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। এতকিছুর পরও দেখেও না দেখার ভান করে আছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

    সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মজমপুর গেটস্থ ট্রাফিক মোড়ে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর মহাসড়কের উপর ইজিবাইক স্ট্যান্ড করে রাখা হয়েছে। আর এই স্ট্যান্ড গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একপাশে অটোরিকশা স্ট্যান্ড, অপর পাশে বসানো হয়েছে কাঁচাবাজার। সড়ক প্রসস্থকরন যেনো দখলদারদের জন্য।

    দুর্ভোগের শেষ নেই পথচারীদের। মহাসড়ক দখল হয়ে যাওয়ার প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় নানান ধরনের দুর্ঘটনা। প্রশাসনের চোখের সামনে মহাসড়কে অবাধে ইজিবাইক স্ট্যান্ড থাকলেও চোখে দেখেও দেখেন না ট্রাফিক পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা। তবে যখন কোন প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা অথবা ভিআইপি মানুষ যাতায়াত করে থাকে তখন সড়কের ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হয়। থাকে না কোন যানজট, দেখা মেলে না কোন জনদুর্ভোগের। যাতায়াত হওয়ার পর আবারো পূর্বের রূপে ফিরে আসে কুষ্টিয়ার প্রাণকেন্দ্র মজমপুর গেট।

    এদিকে চৌড়হাস বিমান মোড় এলাকার মহাসড়কের চিত্রটাও একই রকম। রাস্তার অর্ধেক অংশ জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে ইজিবাইক। যেখানে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ রয়েছে মহাসড়কে থ্রি হুইলার যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। সেখানে নির্দেশ অমান্য করে কুষ্টিয়ার মহাসড়ক দখলে রেখেছে থ্রি হুইলার যানবাহনগুলো।

    অন্যদিকে শহরের নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কও (এন.এস রোড) দখলে রেখেছে ব্যাটারী চালিত যান ইজিবাইক। এই থ্রি হুইলার যানবাহনের দৌরাত্ম্যে কোনটাসা শহরবাসী। শহরের বিভিন্ন জনবহুল মোড়ে এসব যানবাহনকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজটের। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ইজিবাইক চালিত হওয়ায় কারণে প্রতিনিয়ত শহরের মূল সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু মোড়ে (থানা ট্রাফিক মোড়, বড় বাজার রেলগেট, সিঙ্গার মোড়) ট্রাফিক পুলিশের অবস্থান থাকলেও হরহামেশায় এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে তাদের তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়না।

    পথচারীরা বলছেন, ইজিবাইকগুলো যেভাবে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়ক দখল করে স্ট্যান্ড বানিয়ে রেখেছেন এতে করে অন্যান্য যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।শুধু তাই নয়, এদের কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় নানান ধরনের দুর্ঘটনা। এসব চালকদের নেই কোন প্রশিক্ষণ। রাস্তায় চলমান অবস্থায় যেখানে সেখানে যে কেউ হাত মারলেই সেখানেই থামিয়ে ফেলেন তারা। কিন্তু কাকে বলবেন, কে সমস্যা সমাধান করবে? এই ইজিবাইক চালকেরা সবাইকে ম্যানেজ করে চলে। সড়ক আইন শুধুমাত্র মোটরসাইকেল জন্য। কারন এদের কাছ থেকে মাসোহারা পায় না প্রশাসন। অদক্ষ ইজিবাইক চালক ও নিয়ন্ত্রণহীন ইজিবাইক শহরবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

    এ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জজকোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী সঞ্জয় কুমার ঘোষ বলেন, কারোর রুজি রুটি বন্ধ করা ঠিক হবে না। মূল সড়ক ও মহাসড়কে ইজিবাইক চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে শহরের বিভিন্ন ওলি গলি এবং মহাসড়ক সংলগ্ন পকেট রাস্তায় তাদের নির্দিষ্ট গতিতে চলাচল উন্মুক্ত রাখতে হবে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত যারা রুজি রুটির তাগিদে দূর দূরান্তের ইউনিয়ন থেকে শহরে ইজিবাইক নিয়ে আসছেন তাদেরকে নিজ এলাকায় যানবাহন চালাতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

    এই ব্যাপারে বিআরটিএ কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) আতিকুল আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

    ইজিবাইকের দৌরাত্ম কমিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘবে পৌরসভার পদক্ষেপ জানতে কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, পদক্ষেপ নিচ্ছি তবে আমরা সাকসেস হচ্ছি না। আমাদের পদক্ষেপের ভিতরেও একটু কমতি আছে। সকলের সহযোগিতা দরকার। ইজিবাইক যারা চালাচ্ছে এবং আমরা যারা যাত্রী হয়ে উঠছি সকলকেই সচেতন হতে হবে। আমরা রাস্তার মাঝখানে হাত উঠিয়ে ইজিবাইক দাঁড় করিয়ে উঠি। যে চালক দাঁড় করায় না তার ইজিবাইকে উঠি না। এরকম একটা বিষয় হয়ে গেছে। ঐ জায়গা থেকে মানসিকভাবে সবার সুস্থ ধারায় চলে আসা দরকার। মানুষকে পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। না হলে জাতির আসলে পরিত্রাণ নেই।

    বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ ফখরুল আরেফিন জানান, ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয় কুষ্টিয়া পৌরসভা। ইজিবাইকের বিষয়ে সড়ক পরিবহন আইনে ট্রাফিক পুলিশের কিছু করার নেই। কুষ্টিয়া পৌরসভা বলে, তারা ২৭শ ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার ইজিবাইক রাস্তায় চলতে দেখি। এগুলো কন্ট্রোল করার কোন আইন ট্রাফিক পুলিশের নেই। তারপরও পৌরসভা আইন ও অন্যান্য আইনে এটা কন্ট্রোলে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমার ধারণা, ইজিবাইকের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সমস্যা বেশি তৈরি হচ্ছে।

    Spread the love